‘নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণের ১৭ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম চৌধুরী। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে
‘নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণের ১৭ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম চৌধুরী। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে

কোনো সরকারই বিচার বিভাগের প্রতি যথার্থ নজর দেয়নি: মইনুল ইসলাম

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, কোনো সরকারই বিচার বিভাগের প্রতি কখনো যথার্থ নজর দেয়নি। ফলে এ বিভাগ সরকারের সবচেয়ে দুর্বলতম বিভাগে পরিণত হয়েছে। মানুষ যদি অনুভব করে যে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, তাহলে রাষ্ট্রে সেই বিচার বিভাগের কোনো আস্থার জায়গা থাকে না।

‘নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণের ১৭ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। মিনৌরী বাংলাদেশের সহায়তায় মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন এবং মাসিক আইন ও বিচার আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সভার আয়োজন করে।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিচার বিভাগের আজকের অবস্থা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা। আইনজীবীরা বিচারকাজের সহযোগী। আদালতে বেঞ্চ আর বার একই মুদ্রার দুটো পিঠ। এই দুই অংশকে সমন্বয় করে বিচার বিভাগ সাজাতে হবে।’

বিচারকদের মানসিকভাবে স্বাধীন হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, না হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে পারবে না। বিচার বিভাগ আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা নির্ধারণে কাজ করতে পারে, কিন্তু স্বাধীনভাবে।

বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয়ের দাবি নিয়েই তাঁদের সংগ্রাম বলে উল্লেখ করেন সাবেক জেলা জজ মাসদার হোসেন। আইন সংস্কার কমিশনের সদস্য মাসদার হোসেন বলেন, ‘বিচার বিভাগ প্রধান বিচারপতির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। এমন একটি কাঠামো করতে হবে, যেখানে বিচারকদের নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ের সব সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতির কাছে থাকবে। বাংলাদেশে কাগজে–কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও তা আশা পূরণ করতে পারেনি। আজও বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসন।’

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদও বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে নেওয়ার কথা বলেন। তবে সুপ্রিম কোর্টে তা নিয়ন্ত্রণের মতো অবকাঠামো ও পরিস্থিতি আগে ঠিক করতে হবে উল্লেখ করেন তিনি। বর্তমানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য জিমি আমির বলেন, মানুষ সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল বলেই ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়েছে। তাই সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। সুবিচারের জন্যই বিচার বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে হবে।

বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খাদেমুল ইসলাম বলেন, বিচারকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত না করতে পারলে মানুষের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়।

সভাপতির বক্তব্যে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, শুধু গত ১৬ বছর নয়, ৫৩ বছরের অবিচার ধরে কথা বলতে হবে। বিচার বিভাগের সংকট কখনোই কাম্য নয়।

আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাদিয়া আরমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ।