উপসচিব পদে পদোন্নতির এক দিন পর গতকাল বুধবার ১৭৫ জনকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করেছে সরকার। প্রশাসনিক কাঠামোয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পদে পদোন্নতি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কর্মকর্তারা খুশি। কিন্তু এই খুশির মধ্যেও আরেকটি বাস্তবতা আবারও সামনে এসেছে। সেটি হলো পদোন্নতি হলেও বেশির ভাগ কর্মকর্তাকেই কাজ করতে হবে আগের পদেই। অর্থাৎ তাঁরা উপসচিব হিসেবে যে কাজ করে আসছিলেন, এখনো সে কাজই করতে হবে। কারণ, এই পদোন্নতির পর নিয়মিত পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে।
নতুন পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়ে এখন সরকারের যুগ্ম সচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮৮। কিন্তু প্রশাসনে যুগ্ম সচিবের নিয়মিত পদ আছে ৫০২টি। এই পরিসংখ্যান বলছে, নিয়মিত পদের চেয়ে ৩৮৬ জন যুগ্ম সচিব বেশি। এ কারণে এসব কর্মকর্তাকে স্বাভাবিকভাবেই আগের পদে কাজ করতে হবে। অন্য অনেককেও আগের পদে কাজ করতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত সচিবের ক্ষেত্রেও নিয়মিত পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি। এ জন্য ওই পদের অনেক কর্মকর্তা এখন যুগ্ম সচিবের কাজ করছেন। আবার এর আগে যাঁরা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন, তাঁদেরও অনেকে এক ধাপ নিচের পদে, অর্থাৎ উপসচিব পদে কাজ করছেন। ফলে, যুগ্ম সচিবের নিয়মিত পদ খালি হলে তাঁরা আগে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। এ কারণে নতুন পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হওয়া কর্মকর্তাদের খুব শিগগির নিয়মিত যুগ্ম সচিব পদে কাজ পাওয়া সহজ হচ্ছে না।
বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের নিয়মিত পদ আছে ২১২টি। এর সঙ্গে সমপর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেষণে (নির্ধারিত পদের বাইরে অন্যান্য দপ্তর বা সংস্থায় নিয়োগ) থাকা পদ আছে আরও ১২৫টির মতো। সব মিলিয়েও অতিরিক্ত সচিবের পদ দাঁড়ায় ৩৩৭টিতে। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কর্মরত অতিরিক্ত সচিব ছিলেন ৪১৪ জন। অর্থাৎ পদের চেয়ে ৭৭ জন অতিরিক্ত সচিব বেশি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পর্যাপ্ত শূন্য পদ না থাকলেও পদোন্নতির এই প্রবণতা চলছে মোটামুটি এক যুগ ধরে। এ কারণে পদোন্নতি পেলেও বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে কাজ করতে হয় আগের পদেই। অবশ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সময় ও যোগ্য হলে পদোন্নতি হওয়া উচিত।
এদিকে একই কারণে গত মঙ্গলবার উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া ২৫৯ কর্মকর্তার মধ্যে অধিকাংশকেই আগের পদে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারসহ বিভিন্ন ক্যাডারের আড়াই শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতির পর এখন সরকারের উপসচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯৩। এ পদে কার্যত নিয়মিত পদ আছে হাজারখানেক। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সারা দেশে সমপর্যায়ের পদগুলো মিলিয়ে উপসচিব বা সমপর্যায়ের পদ আছে ১ হাজার ৭৫০টি।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পদে পদোন্নতির জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই প্রক্রিয়া চলছিল। এখন পরপর দুই দিনে এসব পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়মানুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে। তাঁদের ই-মেইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এরপর পদায়ন করে নতুন আদেশ জারি করা হবে। তবে পর্যাপ্ত পদ না থাকায় অধিকাংশ কর্মকর্তাকে আগের পদেই কাজ করতে হবে।
এবার যুগ্ম সচিব পদে নতুন করে ২১তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৬৫ জন দেশে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত। এ ছাড়া ১০ জন বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাস বা হাইকমিশনে কর্মরত।
পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদোন্নতি পেয়েছেন। ডিসির পদটি মূলত উপসচিব পদমর্যাদার। এখন পদোন্নতির পর এই ১৩ জন ডিসিকে খুব শিগগির বদলি করে অন্যত্র পদায়ন করা হবে। ফলে জেলা প্রশাসক পদেও শিগগিরই বড় পরিবর্তন আসছে। ইতিমধ্যে ডিসি পদে নিয়োগের জন্য যোগ্য কর্মকর্তার তালিকাও (ফিস্ট লিস্ট) প্রস্তুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এবার ২৪তম বিসিএসের পাশাপাশি নতুন করে ২৫তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তাকেও ডিসি করা হতে পারে বলে আলোচনা আছে। যোগ্যদের তালিকায় এ বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তাদেরও রাখা হয়েছে।