‘ছয় দিন ডিবি হেফাজতে ছয়জনকে আটকে রাখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে আটকে রাখবেন কীভাবে,’ ছয় দিন পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় থেকে ছাড়া পেয়ে এই প্রশ্ন করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, যত দিন গণগ্রেপ্তার, জুলুম ও নির্যাতন চলবে, তত দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও চলবে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পান সারজিসসহ আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। এরপর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে সারজিস ওই পোস্ট দিয়েছেন। জানতে চাইলে সারজিস আলম ফেসবুকে ওই পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘পোস্টটি দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট উধাও হয়ে গেছে। অ্যাকাউন্ট দেখা যাচ্ছে না। সেটি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চলছে।’ ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘যত দিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে, গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে, তত দিন এ লড়াই চলবে।’
সারজিস আরও লেখেন, ‘কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না; আপনারা কথা রাখেননি। আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারা দেশে আমার স্কুল–কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিপেটা করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন। বাবাকে হুমকি দিয়েছেন! মাশরুর তার উদাহরণ।’
সারজিস আরও লিখেছেন, ‘যারা একটিবারের জন্যও এই আন্দোলনে এসেছে, তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেপ্তারের ভয়ে থাকে। এমন অনেকে আছে, যাদের পরিবার এখনো তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিত ছিল না! কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতু ভবনে হামলার জন্য গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলেন। সঙ্গে আছে আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী। রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। কী ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?’
প্রশ্ন তুলে সারজিস আরও লেখেন, ‘ছয় দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায়, কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত, সেগুলো কীভাবে নিবৃত্ত করবেন?’
সারজিস আরও লিখেছেন, ‘পুলিশ ভাইদের উদ্দেশে একটা কথা বলি। এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের ওপর নয়, পুলিশের ওপর নয়। এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার ওপর। যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার ওপর। ওই পোশাক ছেড়ে আসুন আমাদের সঙ্গে, বুকে টেনে নেব।’
সারজিস যুক্ত করেন, ‘পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনো কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যত দিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে, তত দিন এ লড়াই চলবে।’