সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চার মামলা, দুটি হত্যার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, ধানমন্ডি ও গুলশান থানায় এসব মামলা হয়। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাবেক আইজিপিসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের আসামি করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এরপর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২১৮টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮৭টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

গুলশানে গুলি করে হত্যা

রাজধানীর গুলশানে আবদুল গনি নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় এ মামলা করেন আবদুল গনির বাবা আবদুল মজিদ শেখ। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান থানা এলাকার শাহজাদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নেন আবদুল গনি। তখন গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক সমন্বয়ক মোহাম্মদ শামসুল হক এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে আসামি করা হয়েছে।

ধানমন্ডিতে যুবককে গুলি করে হত্যা

রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড এলাকায় হাসনাইন আহম্মেদ নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। হাসনাইনের আত্মীয় রেজাউল হক বাদী হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ জুলাই রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার মিছিল হচ্ছিল। মিছিলে অংশ নেন হাসনাইন আহম্মেদ। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতা–কর্মীসহ ২০০ জন সন্ত্রাসী মিছিলে হামলা করে। বুকে গুলি লাগে হাসনাইন আহম্মেদের। পরে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল এবং ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদকে আসামি করা হয়েছে।

মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হন যুবক

রাজধানীর মিরপুরে আজাদ হোসেন (২৯) নামের এক যুবককে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর থানায় এ মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট সকাল ১০টার সময় মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নেন আজাদ হোসেন। তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগের ৪০ জনসহ অন্যরা হামলা চালান। এ সময় আজাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে আসামি করা হয়েছে।

যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হন যুবক

যাত্রাবাড়ীতে শুক্কুর আলী রনি নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী শুক্কুর আলী বাদী হয়ে গত ২৪ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা করেন। মামলায় যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং উপকমিশনার আশরাফ ইমামকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই বিকেল চারটার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সুফিয়া গার্মেন্টসের সামনে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হামলা করেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা। এলোপাতাড়ি গুলি চালালে শুক্কুর আলী গুলিবিদ্ধ হন।