জানালেন আইনমন্ত্রী

মানবাধিকার নিয়ে গঠনমূলক সুপারিশ বেশি, সমালোচনা কানাডা ও স্লোভাকিয়ার

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ইউপিআরে আলোচনা নিয়ে কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
ছবি: প্রথম আলো

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার চতুর্থ ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বা সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনায় ১১১টি দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে মন্তব্য বা সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, এর মধ্যে ৯০ ভাগের মতো দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অগ্রগতির বিষয়ে প্রশংসা করে গঠনমূলক সুপারিশ করেছে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ভার্চুয়্যাল সংবাদ সম্মেলনে ইউপিআরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অনুষ্ঠিত ইউপিআরে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর তিনি সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল হক বলেন, ‘মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে রিভিউয়ে (পর্যালোচনা) অংশগ্রহণকারী দেশগুলো বেশ কিছু গঠনমূলক সুপারিশ করেছে। তবে কানাডা ও স্লোভাকিয়া বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম—এরা সবাই আমাদের অগ্রগতির প্রশংসা করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্র যেমন—নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেছে। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও বেলজিয়াম ছিল। তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছে। সে ক্ষেত্রে আমি নির্বাচনের ব্যাপারে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি।’

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু রাষ্ট্র থেকে পাওয়া সুপারিশের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে পরামর্শ পেয়েছি, সেগুলো পরীক্ষা করব। আমরা সুপারিশগুলোর বিষয়ে আমাদের মতামত জানাব। আগামী পরশু (বুধবার) পুরো সুপারিশগুলো আমরা পাব। সুপারিশ পেলে আমরা চিন্তা করব, কোনটা কোনটা রাখব, কোনটা রাখব না। সুপারিশগুলো নিয়ে আমরা অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করব এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে (অগ্রগতি প্রতিবেদন) জমা দেব।’

ইউপিআরে বাংলাদেশ নিয়ে যেসব বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যক্রম ও ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা; জাতীয় পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা; মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা; প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া; ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দূর করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখা; শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির প্রচেষ্টা জোরদার করা; নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা; অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা; গ্রামপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা; বাল্যবিবাহ রোধে প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং মানব পাচার বন্ধে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

সোমবার ইউপিআরে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এর আগে ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা হয়েছে। এবারের ইউপিআরে বাংলাদেশের মানবাধিকারসহ সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বক্তব্যের পর আমাকে প্রশ্ন করেনি। তারা গ্রহণ করেছে কি করে নাই, সেটা জোর না দিয়ে যদি আমি বলতে পারি, তাদের হয়তো কোনো প্রশ্ন ছিল না।’

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা প্রসঙ্গে ইউপিআরে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত কী করছে আমরা সেটা বলেছি। আমি মনে করেছি, এটা বলা সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায্য। আমাদের সাংবিধানিক যে অবস্থান, সেটা আমি তুলে ধরেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করা হয়, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে ইউপিআরে কোনো বক্তব্য এসেছে কি না? এ বিষয়ে তিনি বলেন, সংলাপের বিষয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি। বিএনপির চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত জোরালোভাবে আমাদের যে অবস্থা এবং যেটা বাস্তব ও সত্য অবস্থা সেটা বলেছি।’