নতুন আরও দুটি রুটে ঢাকা নগর পরিবহনের বাস চালু হয়েছে। নতুন দুটি রুটে ৫০টি করে ১০০টি বাস নামানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বাস সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
নতুন দুটি রুটের মধ্যে একটি হচ্ছে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে ওয়াশপুর, বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদ গেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিল, টিকাটুলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কোনাপাড়া হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত। আরেকটি রুট হচ্ছে ঘাটারচর থেকে ওয়াশপুর, বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদ গেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী, চাঁনখারপুল, মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক হয়ে পোস্তগোলার কদমতলী পর্যন্ত।
রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে বাস রুট রেশনালাইজেশনের কমিটি গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, প্রেসক্লাব, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত ঢাকা নগর পরিবহনের বাস সেবা শুরু করে। তখন এ রুটে বিআরটিসির ৩০টি দ্বিতল বাস ও বেসরকারি একটি কোম্পানির ২০টি বাস নিয়ে মোট ৫০টি বাস দিয়ে যাত্রা শুরু হয়।
ঢাকার গণপরিবহনের মালিকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। আর ঢাকা ও আশপাশে দুই শতাধিক পথে (রুট) বাস চলাচল করে। যাত্রী তোলার জন্য এক বাসের চালক অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ায় দুর্ঘটনাও ঘটে। এ ব্যবস্থা পরিবর্তনে ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস তুলে নেওয়া। সহজ শর্তের ঋণে নতুন বাস নামানো। বাস চলবে পাঁচ-ছয়টি কোম্পানির অধীন। মালিকেরা বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন।
এ প্রক্রিয়াতেই গত বছরের ডিসেম্বর থেকে রুটভিত্তিক বাস নামানো শুরু হয়েছে। অবশ্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে বাস নামানোর পর ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। তবে বাসগুলো পুরোনো ও ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
আজ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় নতুন দুটি রুটে বাস উদ্বোধনের পর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, এখন থেকে নতুন বাসই ঢাকা শহরে নামবে। কোনো পুরোনো বাস নামার আর সুযোগ থাকবে না। এখন থেকে ২০২২, ভবিষ্যতে ২০২৩—যখনই একেকটি যাত্রাপথ শুরু করা হবে, তখন নতুন বাস দিয়েই সেই যাত্রাপথ শুরু করা হবে।
নগর পরিবহনে সেবার মান ধীরে ধীরে বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ হচ্ছে জানিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এই তিনটি যাত্রাপথ শুরু করতে আমাদের অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের পরীক্ষামূলক ২১ নম্বর যাত্রাপথ থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, সেটার মাধ্যমে আমরা এবার দুটি যাত্রাপথ শুরু করলাম। আগামী নভেম্বরে আরেকটি নতুন রুটে ঢাকা নগর পরিবহনের বাস সেবা শুরু হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আমরা ঢাকা শহরের সকল যাত্রাপথে এই নতুন বাস দিয়ে ঢাকা নগর পরিবহনকে একটি সুশৃঙ্খল গণপরিবহনে পরিণত করব।’
ঢাকা নগর পরিবহনের বাস সেবা নিতে হলে প্রথমে টিকিট কাটতে হয়। এ বাস যত্রতত্র থামে না। নির্ধারিত আসনের বেশি যাত্রী তোলে না। অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না।
আজ দুই রুটে নতুন বাস সেবার উদ্বোধন করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পরিবহনের শৃঙ্খলা, রাস্তার শৃঙ্খলা—এটি আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। সিটি করপোরেশনের বাস রুট রেশনালাইজেশনের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং সবাইকে বলব, আমাদের স্বার্থে এই উদ্যোগকে সফল করবেন। জনস্বার্থে সফল করতে হবে।’
উন্নয়নের সুফল জনগণকে পৌঁছে দিতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার গুরুত্ব তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, এই নগরীতে, বাংলাদেশের সড়কে এত স্থাপনা—কোনো কিছুই সত্যিকারের সুফল দেবে না, রাস্তায় যদি শৃঙ্খলা না থাকে, পরিবহনে যদি শৃঙ্খলা না থাকে, তাহলে সব উন্নয়ন বৃথা হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, রুট পারমিটবিহীন কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। এক রাস্তার গাড়ি আরেক রাস্তায় চলতে পারবে না। নিয়মিত সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে তদারক করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাধারণ যাত্রীদের কথা চিন্তা করে আমাদের কঠোর হতে হবে। এই নগরীকে বাসযোগ্য নগরী করে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাদেক খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ, উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদসহ ডিএমপি, রাজউক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।