ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি ঢাকায়, রোগী বাইরে

প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
ফাইল ছবি

চলতি মাসে প্রতিদিনই ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুধু চলতি মাসেই নয়, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবেই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে বেশি। যদিও শুরুর দিকে এ চিত্র বিপরীত ছিল। তবে সব মিলে ঢাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বাইরের এলাকাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন ঢাকার চেয়ে বাইরে রোগী বেশি হবে। কারণ, ঢাকার বাইরে আগেই ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, এখন তার ফল দেখা যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে রোগী আরও বাড়বে। এই প্রবণতা নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৪৩৫ জন মারা গেলেন। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৬ দিনেই ১৮৪ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা) ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ১৪৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দাঁড়াল ৯২ হাজার ২৪। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৫ হাজার ২৩০ জন ও ঢাকার বাইরে ৪৬ হাজার ৭৯৪ জন ভর্তি হন। তবে গতকাল পর্যন্ত মৃত ৪৩৫ জনের মধ্যে ঢাকায় মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ৩২৯। আর ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ১০৬ জন।

গত বছর সারা দেশে ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত ছিলেন ৩৯ হাজার ২২০ জন। আর ঢাকার বাইরে ছিলেন ২৩ হাজার ১৬১ জন। দেশে ডেঙ্গুতে গত বছর মৃত্যু হয়েছিল ২৮১ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাম্প্রতিক জরিপে ঢাকার চেয়ে এর পাশের দুই নগর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি দেখা গেছে। সম্প্রতি এ জরিপ শেষ হয়েছে। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা ঢাকার একটি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ৮০ বিআই পেয়েছিলাম। সেখানে নারায়ণগঞ্জে সর্বোচ্চ ১১৩। আর গাজীপুরে সর্বোচ্চ ৮৭।’

ঢাকার চেয়ে বাইরের এলাকাগুলোতে ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার রোধে ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মকৌশল’ প্রণয়নের তাগিদ দেন বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, ২০৩০ সালব্যাপী এই কর্মপরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। কারণ, ঢাকার বাইরে শহরগুলোর মশা বিস্তার রোধে পরিকাঠামো শক্তিশালী নয়। এখন পরিকল্পনার মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধে এটা অবশ্যই করতে হবে।