এবার গোলাগুলি টেকনাফ সীমান্তে, থমথমে ঘুমধুম

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের পশ্চিম তুমব্রু সীমান্তে বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড়। এপারে ধানখেতগুলো বাংলাদেশিদের। কিন্তু ওপারের পাহাড়ে গোলাগুলি আতঙ্কে খেতে কমই নামছেন কৃষকেরা
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে সোমবার গোলাগুলি বন্ধ ছিল। তবে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান লোকজন। সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া, বলীবাজার, কোয়ানচিমং ও নাইচাডং সেনা ব্যারাকের পেছনের (পূর্ব দিকে) বিভিন্ন পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির (এএ) তুমুল সংঘর্ষ-গোলাগুলি চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গোলাগুলি বন্ধ থাকায় ঘুমধুম সীমান্তে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও পরিস্থিতি থমথমে ছিল।

স্থানীয় লোকজন জানান, সোমবার দুপুরে রাখাইন রাজ্যের কোয়ানচিমং ও নাইচাডং এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। গুলির শব্দ শুনতে পান নাইচাডংয়ের বিপরীত দিকে (পশ্চিমে) টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা উলুবনিয়া ও কাটাখালী গ্রামের মানুষ। উলুবনিয়া থেকে রাখাইন রাজ্যের কোয়ানচিমং সেনা ব্যারাকের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার।

স্থানীয়দের ধারণা, রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে তুমুল লড়াই হচ্ছে বলে ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলি কিছুক্ষণ থেমেছে। কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে পুনরায় গোলাগুলি শুরু হতে পারে। এর আগেও টানা ২৩ দিন গোলাগুলি চলার পর হঠাৎ দুদিন চুপচাপ ছিল মিয়ানমার। অন্যদিকে ঘুমধুম-উখিয়ার পর টেকনাফ সীমান্তে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ওপারে গোলাগুলির ঘটনায়।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার দুপুরে রাখাইন রাজ্যের নাইচাডং ও কোয়ানচিমং এলাকায় গোলাগুলি হয়েছে। গুলির শব্দ এপারের উলুবনিয়া ও কাটাখালী এলাকায় শোনা গেছে। তাতে শতাধিক পরিবারের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। সেখানে বিজিবি তৎপর আছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. এরফানুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওপারের গোলাগুলির শব্দ এপারের নাফ নদীর তীরঘেঁষা উলুবনিয়া ও কাটাখালী গ্রামের মানুষ শুনতে পেয়েছেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাতটি গ্রাম মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা। গ্রামগুলোতে আড়াই হাজার মানুষের বসতি। ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। মিয়ানমারের কাঁটাতারের পাশের জমিতে ধানখেত এবং আশপাশের পাহাড়ি টিলায় শাকসবজি, ফলমূলের চাষাবাদ করে চলে সংসার। ঘুমধুম সীমান্তের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা ভাগ করে দিয়েছে ২০-৩০ ফুট প্রস্থের ‘তুমব্রু নদী বা তুমব্রু খাল। একসময় খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন এপারের কিছু মানুষ। দুই মাস ধরে ওপারের পাহাড়ে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, পাহাড়ের চৌকি ও ঘাঁটি থেকে গোলাগুলি, থেমে থেমে মর্টারের গোলা নিক্ষেপের ঘটনায় মাছ আহরণ, ধানখেতে সার ও কীটনাশক ছিটানো বন্ধ আছে।

একইভাবে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে ছয় হাজার একরের ধানখেত, চিংড়ি ও কাঁকড়া খামার রয়েছে। গোলাগুলির কারণে ১৫ দিন ধরে সেখানে যেতে পারছেন না কেউ। অবশ্য গোলাগুলি বন্ধ থাকায় গতকাল সকালে পালংখালী খালে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে নামেন কয়েকজন জেলে।

তাঁদের একজন শফি উল্লাহ (৪৫) বলেন, ওপারের গোলাগুলিতে ১৫-২০ দিন ধরে নাফ নদীর প্যারাবনে মাছ ধরতে পারছেন না। পরিবারে আর্থিক সংকট চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় তাঁরা কয়েকজন খালে নামেন। কিন্তু গোলা–আতঙ্ক এবং বিজিবির তৎপরতায় তাঁদের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়েছে।

ঘুমধুমের ইউপি চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার সারা দিন সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।