যুক্তরাষ্ট্রের ছয় সদস্যের প্রাক্‌–নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আসছে অক্টোবরে

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রেস অ্যাটাশে ও মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার আজ আমেরিকান সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্‌-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল সম্পর্কে সাংবাদিকদের নানা তথ্য জানান
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তা যাচাই করতে একটি প্রতিনিধিদল আসছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক্‌-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন (পিইএএম) পরিচালনা করবে। ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং তাদের সহায়তাকারীরা আগামী ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবেন।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রেস অ্যাটাশে ও মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। বাংলাদেশে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) নতুন মিশন পরিচালক রিড এশলিম্যানের নতুন দায়িত্ব নেওয়া উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে ইউএসএআইডির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকের থেকে প্রশ্ন করা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া কি অব্যাহত রাখবে? জবাবে এশলিম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের এবং বাংলাদেশের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চায়। এটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষিত অবস্থান। তবে নির্বাচনে কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো তাঁদের কাজ নয়। তাঁরা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বেশি আগ্রহী নন। নির্বাচনপ্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহী।  

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (ইন্দো-প্যাসেফিক) জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ওপর বৈদেশিক সহায়তা নির্ভর করছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে এশলিম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশে গত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছে। বাংলাদেশের কৃষি, খাদ্য, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য এবং তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে।  

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র জানান, প্রাক্‌-নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক দল, নাগরিক পর্যবেক্ষক, নাগরিক সংগঠন এবং নারী ও তরুণদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবে। বাংলাদেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কথা বলবেন। সফর শেষ হলে প্রতিনিধিদলটি একটি বিবৃতি (পাবলিক স্টেটমেন্ট) দেবে। নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে তাদের যদি কোনো উদ্বেগ থাকে তা জানাবে এবং বাস্তবসম্মত সুপারিশ থাকলে তা-ও উল্লেখ করবে।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) নতুন মিশন পরিচালক রিড এশলিম্যানের নতুন দায়িত্ব নেওয়া উপলক্ষে আমেরিকান সেন্টারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়

প্রতিনিধিদলটি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদার ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবে।  প্রতিনিধিদলটির প্রাথমিক লক্ষ্য হবে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তথ্য তুলে ধরা। এর পাশাপাশি তারা নির্বাচনের দিন সীমিতসংখ্যক আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানো হবে কি না, সে বিষয়ে মতামত দেবে।  

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশসহ নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ সফর করে যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।