কয়লার অভাবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো বন্ধ। একই সমস্যায় সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদন করছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। জরুরি ভিত্তিতে চালু করা হলেও কয়লার মজুত শেষ হওয়ায় তিন দিন পর বন্ধ হয়ে গেছে বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতে চলমান লোডশেডিংয়ে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে বৃষ্টি। গ্রামে এখনো লোডশেডিং হচ্ছে কোনো না কোনো সময়ে। তবে ঢাকায় লোডশেডিং নেই গত তিন দিন।
টানা ১২ দিন পর গত বৃহস্পতিবার সামান্য বৃষ্টির দেখা পায় ঢাকার মানুষ। এরপর শুক্রবার দুপুরের আগেই ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সারা দেশেই তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কমে গেছে তাপমাত্রা। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে গড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। তাই কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও চাহিদামতো সরবরাহ করা যাচ্ছে এখন।
এর আগে গত ২৮ মে থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হলে বেড়ে যায় লোডশেডিং। দিনে কোনো কোনো ঘণ্টায় সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটে। এতে দেশের অনেক গ্রাম এলাকায় ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। ওই সময় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও কমে যায় উৎপাদন। ২৫ মে বন্ধ হয়ে যায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। এরপর এ কেন্দ্রে পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ হয় ৫ জুন। উৎপাদন বাড়াতে ৫ জুন থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে এস এস পাওয়ারের নির্মিত বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি থেকে দিনে ৩৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ নেওয়া হয়। ১৩ জুন থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা এ কেন্দ্রের। কিন্তু কয়লার অভাবে ৮ জুন রাতে এ কেন্দ্র থেকেও উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে কয়লা আসতে আরও এক সপ্তাহ লাগতে পারে।
তবে লোডশেডিং পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় করতে ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি পাওয়ার নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। গত মার্চ থেকে দিনে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এলেও বর্তমানে তারা সরবরাহ বাড়িয়েছে। এখন সেখান থেকে আসছে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা নিয়ে নতুন একটি জাহাজ এসেছে। এতে আপাতত এ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা নেই। আর ২৫ জুনের মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা দেশে পৌঁছাতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের পরিত্যক্ত একটি কূপ থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু করে দেশে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বাড়িয়েছে পেট্রোবাংলা। শুক্রবার সকালে এ কূপ থেকে ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। এতে দিনে সব মিলিয়ে এখন মোট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে প্রায় ৩০৪ কোটি ঘনফুট। এতে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে দিনে এখন ১২০ কোটি ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহ ধরে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। দিনের বেলায় উৎপাদন করা হতো ১০ থেকে ১১ হাজার এবং রাতে ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার রাতে ২ ঘণ্টায় সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়। এ ছাড়া তিন দিন ধরে ১০ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। এতে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টায় সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে ৩৩৬ মেগাওয়াট।