স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

হামলার আগে কেএনএফ বিদ্যুতের উপকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির চেষ্টার সঙ্গে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা জড়িত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, তারা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে (ব্যবস্থাপক) জিম্মি করে নিয়ে গেছে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে মঙ্গলবার রাতে রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় হামলা চালায় কেএনএফ। এরপর আজ বুধবার দুপুরে বান্দরবানের থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় হামলা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেনএনএফ দেশের জঙ্গিদের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সেনাবাহিনী ও র‍্যাব অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ইদানীং আমরা দেখছিলাম, কুকি-চিন আবার বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছিল।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যগুলো সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, রুমায় সোনালী ব্যাংকে ঢোকার আগে কেএনএফ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন বন্ধ করে। পরে তারা সোনালী ব্যাংকের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ সদস্যের বেশির ভাগ এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক স্থানীয় মসজিদে তারাবিহর নামাজে ছিলেন।

কেএনএফ সেই সময় ঢুকে পুলিশের গার্ড কমান্ডার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মামুনুর রহমান ও কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলামকে আহত করে দুটি লাইট মেশিন গান (এসএমজি) ও আটটি চীনা রাইফেল লুট করে এবং উপজেলা কমপ্লেক্সে থাকা আনসার সদস্যদের শটগানগুলো নিয়ে নেয় বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রের পাশাপাশি গুলি নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আজ দিনে দেখলাম কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে হামলা করেছে। অপারেশন চলছে, বিজিবি ও পুলিশ সেখানে গোলাগুলি করছে। কত টাকা নিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি কত, বলতে পারব না।’

এদিকে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে কোনো টাকা লুট হয়নি। সিআইডির চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ইউনিটের দুটি দল রুমায় গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। পরে ব্যাংকের ভল্ট খুলে সব টাকা গুনে দেখা হয়। দেখা যায়, মঙ্গলবার রাখা ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকার পুরোটা রয়েছে।

অবশ্য থানচিতে দুটি ব্যাংকের শাখা থেকে অস্ত্রধারীরা সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন বলে জানান ব্যাংক দুটির শাখা কর্মকর্তারা।

কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।

সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেলপাড়ায়।