বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে বাইরে রাখার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া ও উপসচিব পদে সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সমান সুযোগ দেওয়াসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সব দাবি মানা না হলে ৩১ ডিসেম্বর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।
পদ-পদোন্নতিসহ চাকরিসংক্রান্ত নানা দাবিতে এখন পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সরকারি চাকরিতে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব বাড়ছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে কমিশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে।
মূলত এ বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এমন সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতির কোটা কমে যাবে বলে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ জন্য তাঁদের দাবি, সহকারী কমিশনার (শুরুর পদ) থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ প্রশাসনের শতভাগ পদ হতে হবে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য। এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের দাবিতে গত রোববার সচিবালয়ে বড় জমায়েত করেন।
অন্যদিকে ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ আজ মঙ্গলবার এক ঘণ্টার ‘কলমবিরতি’র মাধ্যমে প্রকাশ্যে আন্দোলনে নেমেছে।
২৫ ক্যাডারের মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে বড় ক্যাডার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার। এই দুই ক্যাডারে কর্মকর্তা রয়েছেন যথাক্রমে প্রায় ১৬ হাজার ও ৩০ হাজারের বেশি। তাঁদের ক্যাডারের বাইরে রাখার সুপারিশের প্রতিবাদে তাঁরা আলাদাভাবে সরব হয়েছেন। এ নিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দুটি দাবি জানিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের দাবির কথা তুলে ধরলেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার–বহির্ভূত করার অশুভ চেষ্টা প্রতিরোধ এবং শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সবার প্রত্যাশা ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য সিভিল সার্ভিসের ২৬ ক্যাডারের মধ্যে বিরাজমান আন্তক্যাডার বৈষম্যগুলো চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের বেসামরিক প্রশাসনকে আরও কার্যকর, গতিশীল ও যুগোপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে। তাদের বিশ্বাস ছিল, এবার হয়তো ৪০ বছর ধরে জমে থাকা সংকটগুলো থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পাবে শিক্ষা ক্যাডার। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সম্প্রতি তাঁদের সুপারিশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে বাইরে রাখার যে পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেছেন, তা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তাকে তীব্রভাবে আহত করেছে এবং উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যেও ফেলে দিয়েছে। এটি রাষ্ট্রকে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিতিশীল করার মতো একটি পদক্ষেপ বলে তাঁরা মনে করেন। এ জন্য তাঁরা এই পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করছেন।
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য দাবির মধ্যে আছে মন্ত্রণালয়সহ ক্যাডার–সংশ্লিষ্ট সব পদে নিজ নিজ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা; সব ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা; শিক্ষার সব স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলোর সব পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডার ও অশিক্ষক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার; শিক্ষা ক্যাডারে ছয় স্তরের পদসোপান প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি।