২৩ আগস্ট অস্ত্র হাতে পাহাড়তলী বাজারে সন্ত্রাসী মনসুর আহমেদ
২৩ আগস্ট অস্ত্র হাতে পাহাড়তলী বাজারে সন্ত্রাসী মনসুর আহমেদ

চট্টগ্রামে অস্ত্রবাজি

টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে ছোড়েন গুলি

বাবার ডিমের আড়তের ভেতর বন্যাদুর্গতের জন্য ত্রাণের প্যাকেট তৈরি করছিলেন কলেজ পড়ুয়া সাইফুল ইসলাম ও তাঁর বন্ধুরা। হঠাৎ সেখানে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়েন চার সন্ত্রাসী। পরে দোকানের ক্যাশ থেকে ৮০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় ছোড়েন ফাঁকা গুলি। যাতে কেউ এগিয়ে আসতে না পারেন।

গত ২৩ আগস্ট দিবাগত তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী বাজারের একটি ডিমের আড়তের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা যায় এই চিত্র। এই লুটে নেতৃত্ব দেন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মনসুর আহাম্মদ (৪৪)। বাকি তিনজন তাঁর সহযোগী।

ঘটনার পরপর বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু দুই মাস পার হলেও এখনো ধরা পড়েননি সন্ত্রাসী মনসুর ও তাঁর সহযোগীরা। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে ডিমের এই পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা।

পুলিশ সূত্র জানায়, মনসুর পাহাড়তলী থানা-পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১২টি মামলা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল পাহাড়তলী বাজারে একটি ডিমের আড়ত রানা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানাকে খুনের মামলার আসামি এই মনসুর। টাকা লুট করতে বাধা দেওয়ায় তাঁকে খুন করা হয়।

এই ঘটনার পর অস্ত্র–গুলিসহ মনসুরকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। আবার জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। বর্তমানে মাসুদ হত্যা মামলাটি বিচারাধীন।

নগরের পাহাড়তলীর দুলালাবাদ এলাকার আবদুল মালেক দারোয়ানের বাড়ির মৃত জমির আহাম্মদের ছেলে মনসুর। বিভিন্ন সময় চুরি–ছিনতাই দিয়ে অপরাধে জড়ান তিনি। ধীরে ধীরে এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের দল গঠন করে শুরু করেন নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

সহযোগীসহ অস্ত্র হাতে দোকানে ঢুকে পড়েন মনসুর

পাহাড়তলীর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা সাবের আহমদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মনসুর। ২০১৮ সালের মনসুরের স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি। সেই মামলাটি এখনো বিচারাধীন।

২৩ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কলেজছাত্র সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেনীতে বন্যাদুর্গতের ত্রাণ দেওয়ার জন্য কয়েকজন বন্ধু পাহাড়তলী বাজারের তাঁর বাবা মো. হেলালের আড়তে বসে প্যাকেট করছিলেন। আড়তের বাইরের শাটার নামানো ছিল। তবে তালাবদ্ধ করা হয়নি। হঠাৎ করে মুখে কাপড় বাঁধা চারজন সন্ত্রাসী সেখানে ঢুকে পড়ে। তাদের একজনের হাতে ছিল অস্ত্র, আরেকজনের হাতে রামদা, বাকি দুজনের হাতে লাঠি। তারা আড়তের ক্যাশ ভেঙে সেখান থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। সঙ্গে তাঁদের কাছে থাকা মুঠোফোনগুলোও। চলে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। যাতে কেউ চিৎকার না করি, আশপাশের কেউ যাতে এগিয়ে না আসে।’

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ঘটনার পরপরই পাহাড়তলী থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। থানা থেকে পুলিশও আসে। কিন্তু ওই সময় থানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অবকাঠামোগত সমস্যা থাকায় কোনো মামলা নেয়নি। জানতে চাইলে পাহাড়তলী থানার তৎকালীন ওসি কেপায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ওই সময় থানায় বসার মতো অবস্থা ছিল না। মামলা নেওয়ার কথা। বিষয়টি মনে পড়ছে না।

পাহাড়তলী বাজারের ডিমের আড়তদার মো. হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ মামলা না নেওয়ায় নিজেরা আর কিছু করার সাহস পাইনি। এখনো আতঙ্কে থাকি।’

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়তলী বাজারে ডিমের আড়তে অস্ত্রের মুখে টাকা লুটের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

২০১৮ সালে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মনসুর (সাদা শার্ট)

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বরও চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজির আরেকটি ঘটনা ঘটে। একটি নির্মাণাধীন ভবনে পাঁচ লাখ টাকার চাঁদা দাবিতে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন। ওই ঘটনায় ভয়ে ভবনমালিকদের কেউ মামলা করেননি।

এরপর ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়া এলাকায় চাঁদা না পেয়ে ইট–বালু ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিনকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয়। এই ঘটনায় করা মামলায়ও সাজ্জাদকে আসামি করে নিহত ব্যক্তির পরিবার। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। তাঁকেও এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।