চট্টগ্রাম নগর আজও পানির নিচে

ভারী বর্ষণে টানা তৃতীয় দিনের মতো ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগর। আজ নগরের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে তোলা। ৬ আগস্ট
ছবি: সৌরভ দাশ

ভারী বর্ষণে টানা তৃতীয় দিনের মতো ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগর। আজ রোববার ভোর থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, অলিগলি ও ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকায় নগরের অন্যতম প্রধান সড়ক সিডিএ অ্যাভিনিউয়সহ অনেক সড়কে কার্যত গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন।

গত দুই দিনের মতো আজও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাড়ির সামনের রাস্তা ও উঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি সামনের মূল সড়কেও পানি ছিল।

গত শুক্রবার বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ও রাতের দিকে পানি নেমে গেলেও পরদিন গতকাল শনিবার ভারী বর্ষণে আবার তলিয়ে যায়। প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন জলাবদ্ধতার ব্যাপকতা কম ছিল। তবে তৃতীয় দিন জলাবদ্ধতা আরও প্রকট হয়েছে। নগরের নিচু এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে যায়। আজ দুপুর ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও জলাবদ্ধতা ছিল।

চট্টগ্রাম নগরের কাতালগঞ্জ এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে। ৬ আগস্ট

আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৯টা থেকে রোববার ৯টা পর্যন্ত) বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২১৮ মিলিমিটার। এই মৌসুমে এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড বলে জানান আবহাওয়ার দপ্তরের কর্মকর্তারা।

এবারের বৃষ্টিতে নগরের চকবাজার, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বাদুরতলা, শান্তিনগর, ফুলতলা, বউবাজার, রাহাত্তার পুল, কালা মিয়া বাজার, তুলাতলী, রুবি গেট, মুরাদপুর, সুন্নিয়া মাদ্রাসা রোড, ডিসি রোড, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, ফরিদারপাড়া, ঘাসিয়াপাড়া, খতিবেরহাট, বারইপাড়া, মাইজপাড়া, খরমপাড়া, বাকলিয়া, মিয়া খান নগর, কে বি আমান আলী সড়ক, সৈয়দ শাহ সড়ক, চাক্তাই, দুই নম্বর গেট, আল ফালাহ গলি, পুরোনো চান্দগাঁও থানা এলাকা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, সাগরিকা ও আকমল আলী সড়কে। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, মসজিদ, বিপণিবিতান, দোকানপাট ও সড়ক ডুবে যায়।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় চকবাজারের কাঁচাবাজার এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, এই এলাকার সিরাজদ্দৌলাহ সড়ক, কে বি আমান এলাকা সড়কে কোমরসমান পানি। সড়কের দুই পাশের দোকানপাটে পানি জমে রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে চক সুপারমার্কেট বন্ধ। কোনো দোকানপাট খোলেনি। পাশের কিছু দোকান খুললেও তাতে বেচাবিক্রির চেয়ে পানি পরিষ্কারের বেশি ব্যস্ত ছিলেন দোকানি ও কর্মচারীরা। সড়কে রিকশা ছাড়া অন্য কিছু চলাচল করতে দেখা যায়নি।

আজ সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকার রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। ৬ আগস্ট

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এলাকার রসুলবাগের বাসিন্দা আদিল আনোয়ার ফারুকী এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। নগরের চকবাজার এলাকায় তাঁর কোচিং সেন্টার। আজ সেখানে ছিল প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা। তিনি বলেন, বাসা থেকে চকবাজার আসতে অন্যান্য দিন রিকশাভাড়া নিত ২০ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু আজ নিয়েছে ১০০ টাকা।

আবদুল মাবুদ নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর বাসা ফুলতলা এলাকায়। তিন দিন ধরে পানিতে ডুবে রয়েছে ঘর। রান্নাবান্না কিছু করা যাচ্ছে না। খাটের ওপর কোনো রকম বসে থাকেন। জলাবদ্ধতায় খুব কষ্ট তাঁদের।

মোহাম্মদ হোসেন নামের এক রিকশাচালক বলেন, তিন দিনের মধ্যে আজকেই সবচেয়ে বেশি পানি উঠেছে। পানির মধ্যে রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। রিকশার চাকাও নষ্ট হয়ে যায়। আবার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রিকশা চালাতে হচ্ছে বলে শরীরও খারাপ হয়।

জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার কাজ চলছে।

গত ৬ বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। আগামী বছরের জুনে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।