কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা ও জুলাই মাসের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা ও জুলাই মাসের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন

মামলা ৭৯৮টি, আসামি ২ লাখ ১৩ হাজার, গ্রেপ্তার ১০ হাজার ৩৭২: এমএসএফ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৭৯৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ মামলায় ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে, যাঁদের অধিকাংশই অজ্ঞাতনামা। আর এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনটি প্রতি মাসেই মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়। দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই এ প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনাই স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমএসএফের পাঠানো প্রতিবেদন বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় কথিত নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৮টি জেলায় ২৫৯ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অন্তত ২৬৬ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৭ হাজার ৭৩০ জন।

আন্দোলনকে ঘিরে পরবর্তী সংঘাতের ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রীয় আক্রমণ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস এবং আন্দোলন দমাতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, অনেক সংবাদমাধ্যম নিহত তরুণ-কিশোর-শিশুদের আড়াল করতে গাড়ি ও স্থাপনা ধ্বংসের খবরের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অপর দিকে চলেছে গণহারে ধরপাকড়।

এমএসএফের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রায় কাছাকাছি জায়গায় অবস্থিত। আক্রান্ত বন ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সেতু ভবন, ডেটা সেন্টার, বিআরটিএ, বাংলাদেশ টেলিভিশন সেন্টার স্পর্শকাতর স্থাপনা। এসব স্থাপনা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা থাকলেও ঘটনার সময় তাঁরা ছিলেন না।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক ও নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের গণগ্রেপ্তার নতুন আকারে শুরু হয়েছে। পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি; বরং দিনে দিনে তা বেড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদানের অধিকার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনের নিরাপত্তার বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে জোর দাবি জানিয়েছে এমএসএফ।