আজ বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় বন্ধ নিয়ে সমন্বয়হীনতা দেখাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রচণ্ড গরমের কারণে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এক দিনের ছুটি ঘোষণা করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গতকাল বুধবার এক আদেশে আজ বৃহস্পতিবার ছুটি থাকবে বলে জানানো হয়।
এর আগে রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। তখন শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা নিয়ে সমালোচনা হয়।
এক দিন পরে সোমবার মাউশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে ছুটি ঘোষণা করা হয়। গতকাল মাউশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও ছুটি দিল। প্রশ্ন উঠেছে, বিদ্যালয় বন্ধ নিয়ে এই সমন্বয়হীনতা কেন। অভিভাবকদের কেউ কেউ বলছেন, বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তটি নেওয়া উচিত ছিল সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বিতভাবে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক দিনের ছুটি ঘোষণার পর গতকাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক এই প্রতিবেদককে বলেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা স্কুল বন্ধ নিয়ে যেটা করেছেন, সেটা দায়িত্বহীনতা। বিষয়টির সঙ্গে শিশুস্বাস্থ্য ও তাদের পড়াশোনা যুক্ত। এটা নিয়ে খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়।
দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলজুড়ে চলতি মাসের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহ বইছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, জুন মাস বিবেচনায় এই তাপপ্রবাহ ৪৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গরমের মধ্যে লোডশেডিংও বেশি। গ্রামে দিনে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর মধ্যে মঙ্গলবার কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বিদ্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট একজন চিকিৎসক গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রচণ্ড গরমে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার সরকারি প্রাথমিকে, সোমবার মাধ্যমিকের প্রাথমিক স্তরে ছুটি দেওয়া হয়। বুধবারে এসে মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ছুটির ঘোষণা।
এ ছাড়া অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রথম দিনে গতকাল বুধবার প্রচণ্ড গরমে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তিনটি উচ্চবিদ্যালয়ের ২৬ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ২৩ জনকে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের গতকাল ও আজ বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
শিক্ষা খাতের নিয়ন্ত্রণ দুই মন্ত্রণালয়ের হাতে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তর এবং মাদ্রাসা (কওমি বাদে) ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রত্যেকেই আলাদাভাবে কাজ করতে চায়, কেউ কারও গণ্ডির মধ্যে অন্যদের প্রবেশ করতে দেয় না। এটিই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ।এম তারিক আহসান, অধ্যাপক, আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তাদের অধীন সংস্থাগুলোর মধ্যে মাঝেমধ্যেই সমন্বয়হীনতার অভিযোগ ওঠে। তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন ও বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপার কাজের মতো কিছু বিষয় নিয়ে। সেই সমন্বয়হীনতা আবার দেখা গেল তাপপ্রবাহের মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ নিয়ে।
বাংলাদেশ শিক্ষা–তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক স্তরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ২ কোটি ১ লাখের বেশি। মাধ্যমিক স্তরে পড়ানো হয় ২০ হাজার ৯৬০ বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখের বেশি।
প্রাথমিকে ছুটি ঘোষণার দিন মাউশির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, অর্ধবার্ষিকী মূল্যায়ন ও পরীক্ষার কারণে মাধ্যমিক স্তর চালু রাখা হচ্ছে। কিন্তু এখন সেখান থেকে সরে এসে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলো। অবশ্য পরের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার।
জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান প্রথম আলোকে বলেন, আসলে শিক্ষা নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থাকাটাই বড় বিশৃঙ্খলার বিষয়। শিক্ষাকে একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে। সেটা হলে শৃঙ্খলা আসত। তিনি বলেন, এখন প্রত্যেকেই আলাদাভাবে কাজ করতে চায়, কেউ কারও গণ্ডির মধ্যে অন্যদের প্রবেশ করতে দেয় না। এটিই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ।