মিরপুর-১০ নম্বরের মেট্রোস্টেশন চালু করতে প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। মেট্রোর উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও বিজয় সরণি স্টেশন থেকে যন্ত্রাংশ এনে স্থাপনের পর স্থানীয় বাজার থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কিনতে এই খরচ হয়েছে। তবে ওই সব স্টেশন থেকে আনা যন্ত্রাংশগুলো দেশের বাইরে থেকে আনার পর পুনরায় স্থাপন করার জন্য আরও ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। সব মিলে মোট খরচ হবে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
আজ মঙ্গলবার মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোস্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে এসব তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। প্রায় তিন মাস পর আজ সকাল থেকে এই স্টেশন চালু করে দেওয়া হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার মধ্যে গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই দিন বিকেল পাঁচটায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়।
গত ২০ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেছিলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি মেরামত করে পুনরায় চালু করতে এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে।’
গত ২৭ জুলাই তখনকার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না।’
২ মাস ২৭ দিন পর আজ মিরপুর ১০ মেট্রোস্টেশন চালু হলো। এর মধ্যে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মেট্রোরেল চালু হলো। কাজটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে, তা জানিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোকে সহায়তা করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেখানে দেশের বাইরে মেট্রোরেলে কাজ করেন—এমন একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সবার সহায়তায় এটা সম্ভব হয়েছে।’
তৎকালীন সরকারের সময় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনের মেরামতের জন্য সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। তবে কাজীপাড়া স্টেশন মেরামতে ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন মেরামতে খরচ হচ্ছে পৌনে ১৯ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘এখানে উন্নয়নের বিষয়ে শিক্ষা আছে। বলা হচ্ছে, এ বছর প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ হবে। সবাই হতাশ। আগে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতো। হিসাব করলে বুঝতে পারবেন, এখানে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয় করলে আর এক বছর ধরে কাজ করলে জিডিপি বাড়ত। কিন্তু প্রকৃত উন্নয়ন হতো না। এখন যে প্রবৃদ্ধির হার, সেগুলো হবে প্রকৃত উন্নয়ন। শুধু অঙ্কের হিসাবে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সর্বোচ্চ যেখানে ১৮ কোটি টাকা খরচ করা হবে, বাকি টাকা যদি বিদেশে যেত, তখন কী উন্নয়ন হতো?’
দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সব প্রতিষ্ঠানকে একে একে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। মেট্রোরই উদাহরণ বলি, যিনি এমডি হবেন, তাঁকে সরকারের সাবেক সচিব হতে হবে। দেশ কি শুধুই সাবেক সচিবদের, নাকি দেশটা সবার। এই নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। এখন মেট্রোর এমডি হতে সাবেক সচিব হওয়ার প্রয়োজন নেই। যোগ্য ব্যক্তি হলেই হবে।’
মেট্রোস্টেশন বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এগুলো ছাত্ররা করেনি, অন্য দুষ্কৃতকারীরা করেছে। কিছু সিসিটিভি ফুটেজ আছে। সেগুলো পুলিশপ্রধানকে দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।’