সংসদ সদস্য আজীম হত্যায় মুম্বাই থেকে কসাই গ্রেপ্তার, জানালেন কীভাবে খুন

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) হত্যার ঘটনায় একজনকে বনগাঁ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম জিহাদ হাওলাদার। তিনি পেশায় কসাই।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর গত বুধবার তাঁর খুন হওয়ার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করে।

আজ শুক্রবার জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির বরাত দিয়ে সংবাদ করেছে।

সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদের বয়স ২৪ বছর। তিনি মুম্বাইয়ের অবৈধ অভিবাসী। তাঁর বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। বাড়ি খুলনার দীঘলিয়ায়।

এদিকে খুলনায় খবর নিয়ে জানা গেছে, ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ হাওলাদার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার ঘটনার ভাড়া করা খুনি কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

গতকাল ভারতের পুলিশ এ হত্যার ঘটনায় সিয়াম নামের একজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলেছিল। তবে সিয়াম এখন কাঠমান্ডুতে বলে জানা গেছে। আসলে জিহাদ হাওলাদারকেই তাঁরা সিয়াম বলে মনে করেছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পর লাশ খণ্ড খণ্ড করে গুম করা হয়। তাঁর পুরো লাশ না পাওয়া গেলেও খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া যাবে মনে করেন তিনি।

আজ পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির বার্তায় বলা হয়েছে, হত্যার ঘটনার দুই মাস আগে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে কলকাতায় নিয়ে আসেন মো. আক্তারুজ্জামান।

এই আক্তারুজ্জামানকেই সংসদ সদস্য আজীম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কলকাতার নিউ টাউনে যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি এই আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই।

কলকাতা সিআইডি বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ স্বীকার করেছেন, আক্তারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি এবং চার বাংলাদেশি মিলে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করেন।

আনোয়ারুলকে তাঁরা প্রথমে শ্বাসরোধে খুন করেন বলে জানান জিহাদ। মৃতের পরিচয় যাতে বোঝা না যায়, তাই তাঁরা শরীরের হাড় ও মাংস আলাদা করে ফেলেন। এরপর হাড় ও মাংস টুকরা টুকরা করে কেটে সবকিছু পলিথিন ব্যাগে ভরে ফ্ল্যাটের বাইরে গিয়ে ফেলে দেন।

গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ হাওলাদারকে বারাসাত কোর্টে তোলা হবে বলে সিআইডির বার্তায় বলা হয়েছে।

আনোয়ারুল আজীম হত্যার ঘটনায় ভারতের কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, খুনের আগে লাশ গুমের পরিকল্পনা সাজান খুনিরা। এ জন্য তাঁরা ট্রলি ব্যাগ, চাপাতি, ব্লিচিং পাউডার, পলিথিনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে রাখেন। ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে আনোয়ারুলকে হত্যার পর লাশ টুকরা টুকরা করে ব্যাগে ভরে সরানো হয়েছে। এর কিছু অংশ কলকাতার একটি খালে ফেলা হয়েছে। কলকাতার পুলিশ খুনিদের ভাড়া ফ্ল্যাটের ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।