নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ কতটা

জীবাশ্ম জ্বালানির দামে অস্থিতিশীলতা, ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ও জলবায়ুর ক্ষতির কারণে নবায়নযোগ্য শক্তি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও নবায়নযোগ্য শক্তির সুবিধা বেশি। সূর্যের তাপসহ নানা উৎস থেকে পাওয়া এই শক্তি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনর্ব্যবহার করা যায়।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো এমন শক্তির উৎস, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। ফলে শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যায় না

সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন (গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট) বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত বিষয়। আমরা সবাই উন্নয়ন চাই, তবে তা হতে হবে যুগপৎভাবে গুণগত ও টেকসই। সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার। প্রথমে নবায়নযোগ্য শক্তি কী ও কেন—সে বিষয়ে আমাদের জানা দরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এবং অ্যাসোসিয়েশন অব একাডেমিস অ্যান্ড সোসাইটিস অব সায়েন্সেস ইন এশিয়ার উদ্যোগে যৌথভাবে আয়োজিত সিম্পোজিয়ামে আমার দেওয়া মূল প্রবন্ধ অনুসরণে এই লেখা।

দুটি ভ্রান্ত ধারণা ও জ্বালানির ইতিহাস

প্রথমেই দুটি ভ্রান্ত ধারণা দূর করা প্রয়োজন। প্রথমটি হচ্ছে—নবায়নযোগ্য শক্তি একটা নতুন কিছু। অথচ জ্বালানির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আদিকাল থেকেই মানুষ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করছে। জীবন ধারণের জন্য আলো, আগুন, তাপ দরকার। পরিবহনে শক্তি দরকার। মানুষ প্রথমে পেশিশক্তি দিয়ে শুরু করে। খাবার গ্রহণের ফলে এই শক্তির নবায়ন হতে থাকে।

পরে গবাদিপশু শক্তির (বিশেষ করে পরিবহন) আরেকটি উৎস হয়ে ওঠে। পাশাপাশি মানুষ সৌরশক্তি, বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার শুরু করে। খ্রিষ্টজন্মের ৩০০ বছর আগে থেকে প্রাচীন গ্রিক এবং ১০০ বছর পর চীনারা পানিচালিত যন্ত্র ব্যবহার করে হাপর চালাত। একাদশ শতাব্দীতে পশ্চিম ইউরোপে মিলিং, কাপড় প্রক্রিয়াকরণ, খনিজ সম্পদ আহরণ প্রভৃতি কাজে তা ব্যবহৃত হতে থাকে। সপ্তম শতাব্দীতে পারস্যে উইন্ডমিল আবিষ্কৃত হয় ও তা সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।

ষোড়শ শতাব্দীতে কয়লার মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানি যুগের সূচনা হয়। জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে কয়লা ও জেমস ওয়াট উদ্ভাবিত উন্নত বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের ব্যবহারের ফলে উৎপাদনপ্রক্রিয়া ও পরিবহনব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটে যায়। ১৮৮০ সালের মধ্যেই কয়লা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রধান জ্বালানি হয়ে ওঠে। কয়লার দাপট চলে প্রায় ১০০ বছর।

ইংল্যান্ডে ১৬৫৯ সালে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় এবং তা সড়কবাতিতে ব্যবহার হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের টেটুসভিল, পেনসিলভানিয়ায় পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয় ১৮৫৯ সালে। জ্বালানি তেল দ্রুত কয়লার বিকল্প হয়ে ওঠে। গাড়িতে অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিনের উদ্ভাবন পরিবহনব্যবস্থায় বিপ্লব আনে। বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানা কাজে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়তে থাকে।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বালানি ভান্ডারে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। প্রথমে কয়লা এবং পরে জ্বালানি তেল ও গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে থাকে। শিল্পবিপ্লবের আগে আদিকাল থেকেই নবায়নযোগ্য শক্তি মানুষের জ্বালানির চাহিদা মিটিয়ে আসছে। সুতরাং নবায়নযোগ্য শক্তি নতুন কিছু নয়।

দ্বিতীয় ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে—নবায়নযোগ্য শক্তি হচ্ছে বিকল্প শক্তি। বোধ করি বিকল্প জীবনধারায় বিশ্বাসী হিপ্পিরা নগরজীবন ছেড়ে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিধায় এই ধারণার উৎপত্তি। তবে আদিকাল থেকে এর ব্যবহার, অফুরন্ত প্রাপ্তি ও পুনঃপূরণযোগ্যতা বিবেচনায় নবায়নযোগ্য শক্তি প্রধান শক্তি অভিধার দাবিদার। বরং ফুরিয়ে যাওয়া ও পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় জীবাশ্ম জ্বালানিকেই বিকল্প শক্তি বলা যায়।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ স্টিফেন পিকের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি কেবল প্রাচীন সূর্যরশ্মির মাধ্যমে সৃষ্ট। তাই নবায়নযোগ্য শক্তিকে বিকল্প শক্তি বলা অনেকটা আপন মাকে বাদ দিয়ে সৎমাকে তার স্থলাভিষিক্ত করার মতো।

বৃত্তের শুরুতে প্রত্যাবর্তন

বিশ্ব এখন আবার বৃত্তচক্রের শুরুতে ফিরে যাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ আসবে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে। উৎসে ফেরার এই প্রবণতা শুরু হয় সত্তরের দশকের শুরুতে, যখন জ্বালানি তেলের দাম চার–পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পরে জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ, পরিবেশের ওপর জীবাশ্ম জ্বালানির অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রবণতা আরও বাড়তে থাকে।

কেন নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণ

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের চারটি চালিকা শক্তি রয়েছে। এক. জীবাশ্ম জ্বালানির মজুত হ্রাস ও ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। অনুমান করা হচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানির (তেল, গ্যাস, কয়লা, ও ইউরেনিয়াম) প্রমাণিত মজুত (২০৭০ ও ২০৯০ সাল) এবং সর্বোচ্চ উত্তোলনযোগ্য মজুত ২০৮০ ও ২১১০ সালের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে যাবে।

দুই. জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্যের অস্থিতিশীলতা ও সূচকের উল্লম্ফন। ১৯৭৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যকার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের মূল্যকে ১০০ ডলার ধরলে বর্তমানে তেল ১৫০, গ্যাস ও কয়লার মূল্য ৩০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির দামের অস্থিতিশীলতা ও সূচকের উল্লম্ফন সব দেশ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিন. জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে। নাসা ও যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৮৫০ থেকে ২০১৯ সাল সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রায় ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।

চার. দীর্ঘদিন নবায়নযোগ্য শক্তির দাম বেশি থাকলেও এখন সস্তা হয়ে উঠছে। ইন্টারন্যাশনাল রিনিউবেল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে ২০২০ সাল থেকে সোলার ফটোভল্টেইকের ব্যয় জীবাশ্ম জ্বালানির কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ সমেত মূল্য অপেক্ষা বেশ কমে গেছে। অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানির কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ সমেত মূল্য ক্রমেই বেড়ে চলছে।

নবায়নযোগ্য শক্তির সংজ্ঞা ও উৎস

নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো এমন শক্তির উৎস, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। ফলে শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যায় না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈবশক্তি (বায়োগ্যাস, বায়োম্যাস, বায়োফুয়েল), ভূ–তাপ, সমুদ্রের ঢেউ, সমুদ্রের তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক উৎস থেকে এটা সংগ্রহ করা হয়, ভোগের তুলনায় অধিকতর হারে এটা পুনঃপূরণ করা হয়ে থাকে। এটি অফুরন্ত ও অনিঃশেষযোগ্য।

পরমাণু কি নবায়নযোগ্য শক্তি

পারমাণবিক শক্তি নবায়নযোগ্য শক্তি কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে বেশির ভাগ বিজ্ঞানী পরমাণু শক্তিকে নবায়নযোগ্য শক্তি মনে করেন না। এর কারণ, পরমাণু চুল্লিতে ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের সরবরাহ সীমিত। এ ছাড়া পারমাণবিক প্রকল্পের বর্জ্যের তেজস্ক্রিয় পদার্থ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

নবায়নযোগ্য শক্তির পেছনের পদার্থবিজ্ঞান

নবায়নযোগ্য শক্তির পেছনের পদার্থবিজ্ঞান বুঝলে এর অফুরন্ত ভান্ডার ও উৎসের ব্যাখ্যা বুঝতে সহায়ক হবে। এখানে তাপগতিবিদ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র প্রণিধানযোগ্য। তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র সহজ কথায় বলা যায়, বিচ্ছিন্ন সিস্টেমের ক্ষেত্রে শক্তির পরিমাণ একই থাকে। শক্তি এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত করা গেলেও তা সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না।

দ্বিতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, যখন প্রাথমিকভাবে তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকা দুটি ব্যবস্থা আলাদা, কিন্তু কাছাকাছি এসে মিথস্ক্রিয়া ঘটায়, শেষ পর্যন্ত তারা পারস্পরিক তাপীয় সাম্যাবস্থায় (থারমাল ইকুলিব্রিয়াম) পৌঁছাবে। উদাহরণস্বরূপ—পানিতে বরফ মেশালে পানির তাপমাত্রা কমবে ও বরফের তাপমাত্রা বেড়ে একটি তাপীয় ভারসাম্য তৈরি হবে। সূর্য হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রধান উৎস। সূর্য ফিউশন প্রক্রিয়ায় চারদিকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক শক্তি ছড়াতে থাকে। সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীর অবস্থানগত কারণে বিষুবরেখার ওপর এই শক্তি আপতিত হয় এবং সেখান থেকে তা বায়ু ও সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার অঞ্চলে ধাবিত হয়। এর মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং তা অব্যাহতভাবে পরিপূরণ হতে থাকে। 

পরিবেশের ওপর নবায়নযোগ্য শক্তির প্রভাব

আগেই বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য শক্তি অফুরন্ত। উদাহরণস্বরূপ—সূর্য থেকে পৃথিবীতে যে পরিমাণ শক্তি আসে, তার ১০ হাজার ভাগের ১ ভাগ মানবজাতি ভোগ করে। যেকোনো জ্বালানিরই পরিবেশের ওপর প্রভাব থাকে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় পরিবেশের ওপর নবায়নযোগ্য শক্তির বিরূপ প্রভাব খুবই কম। এটা স্থান, প্রযুক্তি ও অনুরূপ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

বায়ুবিদ্যুতের ক্ষেত্রে পরিবেশের ওপর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে—জমির ব্যবহার ও বন্য প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। সৌরশক্তির ক্ষেত্রে জমি ও পানির ব্যবহার, বসতি উজাড় ও উৎপাদপ্রক্রিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থের ব্যবহার, ব্যবহার শেষে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য।

ভূ-তাপীয় প্ল্যান্টগুলোর ক্ষেত্রে পরিবেশের ওপর প্রভাব নির্ভর করে বিদ্যুৎ বা তাপ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও শীতলকরণ প্রক্রিয়ার ওপর। বায়োগ্যাস প্রযুক্তির বর্জ্য পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। জলবিদ্যুতের ক্ষেত্রে বাঁধ নির্মাণ করা হলে বসতি, ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশার কথা, আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এসব প্রভাব কমাতে পারি। 

নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের পক্ষে পাঁচ যুক্তি

নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের পক্ষে প্রথম যুক্তি হলো জ্বালানি নিরাপত্তা। জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানির উৎস সীমিত, দাম অস্থিতিশীল। এর মজুত শেষ  হওয়ার পথে। ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জ্বালানি সংকটের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। বিপরীতে, নবায়নযোগ্য শক্তি পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যমান। এতে আমদানির কোনো ঝামেলা নেই।

দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে, এটি সাশ্রয়ী। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ব্যয় কমছে, অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বাড়ছে। ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সাশ্রয় হতে পারে।

তৃতীয় যুক্তি হচ্ছে—জনস্বাস্থ্যের ওপর অনুকূল প্রভাব। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুদূষণ হয় ও স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হয়। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করলে মৃত্যুহার ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় কমবে।

চতুর্থ যুক্তিটি হচ্ছে—কর্মসংস্থান। নবায়নযোগ্য শক্তি একটি বিকেন্দ্রীয় প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে দেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ যুক্তি হচ্ছে—আর্থিক দক্ষতা বৃদ্ধি। জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলো এ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে থাকে, যা এড়ানো গেলে প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় ও বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে।

নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণে সাত চ্যালেঞ্জ

নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণ সহজ কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—এক. রাতে সূর্যের আলো থাকে না, আবার বায়ুপ্রবাহও অনিয়মিত। তাই উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ পরে ব্যবহারের জন্য ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করতে হয়, যা এখনো ব্যয়বহুল।

দুই. নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ প্রাথমিক বিনিয়োগ করতে হয়। এতে সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী নয়। ফলে নবায়নযোগ্য শক্তির অবকাঠামো বাস্তবায়নে সরকার ও ব্যক্তি খাত আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবে একবার বিনিয়োগ করা হলে পরিচালন ব্যয় তুলনামূলক কম।

তিন. রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। রাজনীতিবিদেরা জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদক, আমদানিকারক ও বিতরণকারীদের হাতের পুতুল। তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই নবায়নযোগ্য শক্তি বাস্তবায়নে অনাগ্রহী।

চার. নবায়নযোগ্য শক্তি বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা। এর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ বড় চ্যালেঞ্জ।

পাঁচ. নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে জমির প্রয়োজন হয় যা বসতি, ফসল উৎপাদন, শিল্পকারখানাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাসিন্দারা তাঁদের এলাকায় নবায়নযোগ্য শক্তির স্থাপনা নির্মাণের বিরোধী। ফলে জমি নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ছয়. নবায়নযোগ্য শক্তি বিভিন্ন কারিগরি দিকের। যেমন সোলার সেল ও ব্যাটারি। অবশ্য এসবের উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

সাত. জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাব ও নবায়নযোগ্য শক্তির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা। কাজটি একেবারে সহজ না হলেও অসম্ভব নয়।

পরের লেখায় বাংলাদেশে নবায়ণযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা, অপরিহার্যতা ও বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে আলোচনা করব।

  • মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অর্থনীতিবিদ ও সাবেক সচিব