চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলেছে, বিষয়টি নিয়ে তারা এখনো অন্ধকারে। তবে ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এর মধ্যে দুই দফায় তাঁর মুঠোফোন নম্বর ভারতের দুটি রাজ্যে সচল হওয়ার কথা জানিয়েছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল আজিম পশ্চিমবঙ্গে যান ১২ মে। পরদিন থেকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আর ফেরেননি জানিয়ে জানিয়ে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।
গোপাল বিশ্বাস জিডিতে উল্লেখ করেন, ‘আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে তাঁর ২৫ বছর ধরে পারিবারিক সম্পর্ক। ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আনোয়ারুল আজিম কলকাতার মণ্ডলপাড়া লেনে তাঁর (গোপাল বিশ্বাস) বাড়িতে আসেন। তিনি কলকাতায় আসেন ডাক্তার দেখাতে। পরদিন (১৩ মে) স্থানীয় সময় (কলকাতা) বেলা পৌনে দুইটার দিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল আজিম। যাওয়ার সময় তিনি (আনোয়ারুল) বলে যান, দুপুরে খাবেন না। সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন। পরে তিনি কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে এসে নিজেই গাড়ি ডেকে চলে যান।’
জিডির তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিম সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ফেরেননি। আনোয়ারুল আজিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালকে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফোন করে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন, গোপাল বিশ্বাসের ফোন করার দরকার নেই। পরে ১৫ মে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২১ মিনিটে আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা আসে। তাতে আনোয়ারুল আজিমের দিল্লি পৌঁছানোর কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।’ আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে একই বার্তা বাংলাদেশে তাঁর বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠানো হয়।
এরপর ১৬ মে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের নম্বরে একটি ফোন আসে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়, ব্যক্তিগত সহকারী ফোন ধরতে পারেননি। পরে আনোয়ারুল আজিমকে তিনি (ব্যক্তিগত সহকারী) ফোন করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরদিন ১৭ মে আনোয়ারুলের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান, তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারপর তিনি আনোয়ারুলের পরিচিতদের ফোন করেন। কিন্তু তাঁর কোনো সন্ধান মেলেনি।
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের উপকমিশনার (বারাকপুর দক্ষিণ) অনুপম সিং আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ারুল আজিমের বিষয়ে এখনো কোনো কিছু তাঁরা জানতে পারেননি। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের (আইবি) সূত্র বলেছে, গত চার–পাঁচ দিনে আনোয়ারুল আজিমের মুঠোফোন দুবার সচল হয়েছে। আসাম ও উত্তর প্রদেশে এগুলোর অবস্থান দেখা গেছে।
এদিকে আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফ ও পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে এখন আর কোনো কথা বলতে চাইছেন না। পারিবারিক একটি সূত্র জানিয়েছে, আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস বাবার খোঁজে আজ ভারতে গেছেন।