সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি চালু হয়েছে ১ জুলাই। রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ ৪০৩টি সংস্থায় নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের জন্য প্রত্যয় প্রযোজ্য। কিন্তু গত মার্চে প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই বৈষম্যমূলক মনে করে প্রত্যয় বাতিলের দাবি করে আসছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ফেডারেশনের সভাপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম এ নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম।
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি নিয়ে বিরোধিতা করছেন কেন?
আখতারুল ইসলাম: বিষয়টি নিয়ে সাড়ে তিন মাস ধরে আমরা কথা বলছি। যুক্তিও দিয়ে আসছি। প্রথমেই বলতে পারি, প্রত্যয় কর্মসূচি বৈষম্যমূলক। শুধু বৈষম্যমূলক নয়, এটা অপরিপক্ব। কর্মসূচি চালু করার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল। ২০-৩০ বছর পরের আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা উচিত। মোটকথা, কোনো হিসাব ও দূরদর্শী পর্যবেক্ষণ ছাড়াই চালু করা হয়েছে প্রত্যয়, যা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ৩০ বছর ৫ হাজার টাকা করে (প্রতিষ্ঠান দেবে আরও ৫ হাজার) চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাওয়া যাবে সম্ভাব্য ১ লাখ ২৪ হাজার হাজার ৬৬০ টাকা করে। পরিমাণটাকে কীভাবে দেখছেন?
আখতারুল ইসলাম: ৩০ বছর পরের এই টাকার প্রকৃত মূল্য কী হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায় ৩০ বছর আগের সঙ্গে তুলনা করলে। বর্তমান পেনশন পদ্ধতিতে কোনো চাঁদা দিতে হয় না। আবার আছে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, যাতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যায়। একজন অধ্যাপক যখন অবসরে যান, এককালীন যে প্রায় ৮১ লাখ টাকা আনুতোষিক বর্তমানে পাওয়া যায়, প্রত্যয়ে সেটাও থাকবে না। তাহলে কীভাবে সুবিধা বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, আমার কাছে বোধগম্য নয়। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে ৩০ বছর পর প্রত্যয় থেকে যা পাওয়া যাবে, তা তেমন কোনো অর্থই বহন করবে না।
আপনাদের আর কি দাবি আছে?
আখতারুল ইসলাম: দাবি তো একটা নয়। আমরা চাই সুপার গ্রেড (ধাপ)। আমরা চাই, বেতনকাঠামোর মতো চালু করা হোক পেনশনকাঠামোও। পেনশনকাঠামো চালু করা হলেই সমসাময়িক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পেনশন চালু করা সহজ হবে। বিষয়টি তখন যৌক্তিক হবে। প্রত্যয়ের আওতায় এখন যে পেনশনের পরিমাণের কথা বলা হচ্ছে, ২৫-৩০ বছর পর এ টাকার ক্রয়ক্ষমতা কত হবে, তা–ও তখন বেরিয়ে আসবে।
বর্তমানে আনফান্ডেড (চাঁদা না দিয়ে) ধরনের পেনশনব্যবস্থা আছে, যা বাজেট থেকে দেওয়া হয়। সবার জন্য সুযোগ, অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষকে মাথায় রেখে এখন করা হচ্ছে ফান্ডেড, অর্থাৎ অংশগ্রহণমূলক (কনট্রিবিউটরি) ধরনের ব্যবস্থা। সরকারের পক্ষে বাজেট থেকে দীর্ঘ সময় ধরে পেনশন দেওয়া কতটা সম্ভব?
আখতারুল ইসলাম: প্রত্যয়ের আওতায় যেহেতু বেতন থেকে চাঁদা দিতে হবে, আবার এককালীন আনুতোষিকও বাদ পড়বে, তাহলে আমরা তো বেশিই আশা করব। কিন্তু বেশির তো কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এককালীন আনুতোষিক দিয়ে একটা ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ আছে। বরং সেই সুযোগ এখন আর থাকছে না। ফলে এটাকে গ্রহণ করা কীভাবে সম্ভব? সব মিলিয়ে বিবেচনা করলে প্রত্যয় কর্মসূচির আওতায় যা পাওয়া যাবে, বিদ্যমান পদ্ধতির তুলনায় তা বেশি নয়।
প্রত্যয় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আপনাদের আপত্তি বা দাবি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন?
আখতারুল ইসলাম: আমরা শিক্ষামন্ত্রী পর্যন্ত যেতে পারি। গিয়েছিও। এর বাইরে কোন মন্ত্রণালয়ের কোন টেবিলে কী কাজ হচ্ছে, তা নিয়ে খোঁজ নেওয়া তো আমাদের কাজ নয়। তবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলতে পারি, প্রত্যয় শিক্ষক সমাজের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনছে না। পত্রিকায় পড়লাম এবং টেলিভিশনেও দেখলাম, পেনশন কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য কথা বলছেন। প্রত্যয় নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, উচিত হবে অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পেনশন কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও বিষয়গুলো যাঁরা বোঝেন, তাঁদের নিয়ে বহুপক্ষীয় একটি বৈঠকের আয়োজন করা। তখন যদি একটা সমাধান বেরিয়ে আসে।
সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আখতারুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।