২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল বোমা হামলা হয় রমনার বটমূলে
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল বোমা হামলা হয় রমনার বটমূলে

এক মামলার বিচার শেষ হয়নি ২৩ বছরেও

২৩ বছর আগে রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যা মামলায় রায়ের ৯ বছর পেরোলেও দ্বিতীয় ধাপে মামলাটি এখনো হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আর একই ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটির ২৩ বছরেও বিচার শেষ হয়নি।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বোমা হামলা হয়। ওই ঘটনায় ১০ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হন। বোমা হামলার ঘটনায় হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করে রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। ওই হামলার আজ রোববার ২৩ বছর পূর্ণ হলো।

আদালত সূত্র জানায়, রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলার ১৩ বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

‘ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল চূড়ান্ত শুনানির জন্য আছে। কোর্ট খুললেই এর শুনানি হবে।’
আমিন উদ্দিন, অ্যাটর্নি জেনারেল

বিচারিক আদালতের এ রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে যায়, যা ২০১৪ সালে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
হাইকোর্টে মামলা শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, পেপারবুক প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল ২০১৬ সালে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে প্রথম শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি শুরুও হয়। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। একই বছরের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ওঠে মামলাটি। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। এই বেঞ্চ মামলাটি ‘আংশিক শ্রুত হিসেবে গণ্য হবে না’ উল্লেখ করে ২০২১ সালের ২ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।

গতকাল শনিবার এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল চূড়ান্ত শুনানির জন্য আছে। কোর্ট খুললেই এর শুনানি হবে।’

বিচারিক আদালতের রায়ে মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত অপর ব্যক্তিরা হলেন আকবর হোসেন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান। ২০০৪ সালে সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড ২০১৭ সালে কার্যকর হয়। আদালতের নথি অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর ও আবদুল হাই পলাতক। বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছয় ব্যক্তি হলেন শাহাদাত উল্লা ওরফে জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের।

একই ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটি এখনো ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের আদালতে দ্রুত হাজির করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই মামলা নিষ্পত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু।