হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির একাংশের স্ক্রিনশট
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির একাংশের স্ক্রিনশট

সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের আহ্বান এইচআরডব্লিউর

সুষ্ঠু বিচার ও নিরপেক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের করা উচিত বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। জুলাই–আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রেক্ষাপটে এই অভিমত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি।

এই অভিমত জানিয়ে সোমবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে এইচআরডব্লিউ। মঙ্গলবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এ বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্যসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, শেখ হাসিনা তাঁর সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ‘গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ পরিচালিত করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বিক্ষোভের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাঁর দলের নেতা–কর্মীদের অতিরিক্ত ও নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ এশিয়া গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, ‘জুলাই ও আগস্ট বিক্ষোভের সময় ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং অন্য নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত, বিচার হওয়া উচিত এবং দায় পাওয়া গেলে তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’ তিনি বলেন, সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হলে তা কেবল জবাবদিহিপ্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার এটাই একমাত্র পদ্ধতি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, শেখ হাসিনার সরকার আমলে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য। বিগত সময়ে এই ট্রাইব্যুনালে সুষ্ঠু বিচারের মানদণ্ডগুলো পূরণের ঘাটতি ছিল। সেসব ঘাটতির মধ্যে ছিল তথ্য–প্রমাণ সংগ্রহে ব্যর্থতা, বিচারকদের নিরপেক্ষতার ঘাটতি, আসামিপক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ না পাওয়া, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্বজনদের গুম করা এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এখনো সেদেশে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশ সরকার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করলে এবং অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার পরিবেশ তৈরি ও তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন সংশোধন করলে ভারতসহ সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলোর প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা উচিত হবে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন ও বিচারপ্রক্রিয়া সম্প্রচারের সুযোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষায় আনা সংশোধনী প্রস্তাবের কথাও উল্লেখ করেছে তারা। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং বাংলাদেশের সংবিধানে থাকা অধিকার রক্ষা করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য আরও সংশোধনী প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, বিচার শুরু করার আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে, মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তির যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করার জন্যও সংশোধনী আনা প্রয়োজন। অভিযুক্ত ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার যাতে সুরক্ষিত হয় সে জন্য সংবিধানের ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংশোধনী প্রস্তাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন, সহায়তা করা বা তাতে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাজনৈতিক সংগঠন নিষিদ্ধের পথ উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়টি রয়েছে। এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত হলেও পুরো রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে তা মানুষের স্বাধীনভাবে সমবেত হওয়ার অধিকারসহ অন্যান্য মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করে; এবং তা এমন বিপজ্জনক নজির তৈরি করে যাতে আদালতকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করা হতে পারে।