বাংলাদেশে বাড়িতে অনিরাপদ সন্তান প্রসব ও অস্ত্রোপচারে শিশু জন্মের (সি সেকশন) উচ্চ হারকে সংকটময় পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করেছেন সফররত জাতিসংঘের প্রতিনিধি দিয়েনে কেইতা। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি উত্তরণের সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে সরকারের উচিত সংকট উত্তরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপনির্বাহী পরিচালক দিয়েনে কেইতা দুই দিনের সফরে আজ বুধবার বাংলাদেশে এসেছেন। আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থাপিত ঢাকা নার্সিং কলেজ (ডিএনসি) পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইউএনএফপিএ কার্যালয়ের উপ–আঞ্চলিক পরিচালক আলেকজান্ডার সাশা বদিরোজা এবং ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের উপপ্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকুসরা নূর, ঢাকা নার্সিং কলেজের (ডিএনসি) অধ্যক্ষ শিরিনা আক্তারসহ অনেকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩–এর গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল’ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে এখনো বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। অস্ত্রোপচারে শিশু জন্মের হার প্রায় ৫১ শতাংশ। একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর চারবার বা এর বেশিবার প্রসবপূর্ব সেবা নেওয়ার হার মাত্র ৩৯ শতাংশ। প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু ১৩৬।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু ৭০–এর নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাড়িতে অদক্ষ সেবাদানকারীদের হাতে সন্তান প্রসবের ঝুঁকি কমাতে দেশে মিডওয়াইফের প্রয়োজনীতা অপরিসীম। মিডওয়াইফরা উপজেলা পর্যায়ে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সেবা দিতে কাজ করেন। মিডওয়াইফরা অন্তঃসত্ত্বা নারীকে প্রসবপূর্ব সেবা নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। দক্ষ মিডওয়াইফদের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের হার বাড়ানো সম্ভব। মিডওয়াইফদের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। মিডওয়াইফদের কারণে মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমে এবং পরিবার–পরিকল্পনাপদ্ধতি গ্রহণের হার বাড়ে। সরকার তিন হাজার মিডওয়াইফ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দেশে ২২ হাজার মিডওয়াইফের প্রয়োজন রয়েছে।
দেশে এখনো বাড়িতে সন্তান প্রসবের উচ্চ হার, গত ১৩ মার্চ বাড়িতে সন্তান প্রসবের পর সাফজয়ী নারী ফুটবলার রাজিয়া সুলতানার মৃত্যু, সি সেকশনের উচ্চ হারের কারণে হাসপাতালে সন্তান প্রসবের ভীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় অনুষ্ঠানে। জবাবে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দিয়েনে কেইতা বলেন, ‘এটা খুব সংকটময় একটা পরিস্থিতি। যেসব এলাকায় বাড়িতে প্রসবের হার বেশি, সেসব এলাকায় আগে দেখা উচিত সেখানে হাসপাতালগুলো কাছাকাছি অবস্থানে কি না, বা অন্তঃসত্ত্বা নারীরা সহজে সেবা পান কি না। বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় এই সংকট উত্তরণে বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে এবং এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাও রয়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সন্তান প্রসবের বিষয়টিকে আরও নিরাপদ করা যায় তা দেখা উচিত।’
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দিয়েনে কেইতার সামনে ঢাকা নার্সিং কলেজ (ডিএনসি) নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে জানানো হয়, ১৯৪৭ সালে ডিএনসি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালে চার বছরের বিএসসি নার্সিং কোর্স শুরু হয়। ২০১৩ সালে তিন বছরের মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা কোর্স শুরু হয়। এখন ডিএনসিতে ৪০০ শিক্ষার্থী নার্সিং বিষয়ে বিএসসি করছেন এবং ১৫০ শিক্ষার্থী মিডওয়াইফারি কোর্স করছেন।
দিয়েনে কেইতা পরে মিউওয়াইফারি কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কেক কেটে ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা কলেজের গবেষণাগারে প্রতিনিধি দলের সামনে মডেল দিয়ে নিরাপদ সন্তান প্রসবের প্রক্রিয়া দেখান।