বন্যার পানিতে ১১ দিন ধরে ঘরবন্দী। এর আগে ত্রাণ হিসেবে চিড়া–মুড়ি পেয়েছেন। তবে কখনো চাল–ডাল পাননি। অবশেষ দুবেলা ভাত খেতে পারবেন। ত্রাণসামগ্রী হিসেবে পাওয়া চাল–ডাল হাতে এভাবেই বললেন জহুরা খাতুন। সত্তরোর্ধ্ব এই নারীর বাড়ি নোয়াখালীর নূরপুরে।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার নোয়াখালী সদরের কৃষ্ণপুর ও পূর্ব নূরপুরে বন্যার্ত ১০০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। নোয়াখালী ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ফেনীর ৫৪৫টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। গতকাল ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সৌজন্যে।
ত্রাণ হাতে নোয়াখালীর কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আহছান উল্যাহ (৫০) বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পানিবন্দী। চুলা পানির নিচে। পাশের স্কুলঘরে গিয়ে রান্না করে খাই। সরকারি সাহায্য পাইনি। এর আগে চিড়া–মুড়ি দিলেও কেউ চাল–ডাল দেননি। আজই প্রথম চাল–ডাল পেয়ে ভালো লাগছে।’
গতকাল লক্ষ্মীপুর সদরের উত্তর হামছাদী বাঙ্গাখা ও পার্বতীনগর গ্রামের ১৩৫টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা লক্ষ্মীপুরের সদস্যরা। লক্ষ্মীপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শংকর মজুমদার বলেন, ‘এই অঞ্চলে খুব একটা বন্যা হয় না। হঠাৎ বন্যার কারণে মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকেই এক বেলা খেয়ে, অন্য বেলা না খেয়ে জীবন যাপন করছেন।’
ত্রাণ পেয়ে জাকির হোসেন নামের একজন জানালেন, কয়েক দিন ধরে বাড়ি ও বাড়ির চারপাশে পানি আর পানি। কাজ না থাকায় আয়রোজগারও বন্ধ। এমন অবস্থায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে কষ্টে দিন যাচ্ছে। ত্রাণ পেয়ে পরিবারের সবাই খুশি।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের রঘুরামপুর এলাকায় বন্যার্ত ৩০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা চাঁদপুরের সদস্যরা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. শাহাজান বলেন, হাজার হাজার পরিবার ৮ থেকে ১০ দিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে এসে ত্রাণ দিলেও সবাই তা পাচ্ছেন না। কারণ, বন্যার কারণে রাস্তাঘাট অচল হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গতকাল ফেনীর পরশুরাম উপজেলার ছয়টি গ্রামের ৮০টি পরিবার ও ছাগলনাইয়া উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়নের ৩০টি বন্যার্ত পরিবারের হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। ত্রাণ পেয়ে কাউতলী গ্রামের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, ‘আট দিন পানিবন্দী ছিলাম। এ এলাকায় ত্রাণ তেমন আসেনি বললেই চলে। আজ দ্বিতীয়বারের মতো ত্রাণ পেলাম। আপনাদের ধন্যবাদ।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী; প্রতিনিধি, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর]