অবকাঠামো উন্নয়নের এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দুবার, ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া নেওয়া হয়েছিল প্রকল্পটি। দুবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদও শেষ হয় চলতি বছরের জুনে। এখনো ৫০ শতাংশ কাজ বাকি।
২০১৭ সালের ১৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় এই উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পের অধীনে একাডেমিক ভবন, ছাত্রছাত্রী হল, ডরমিটরি, চিকিৎসাকেন্দ্র, মসজিদ, গবেষণাকেন্দ্রসহ ২৬ রকমের নির্মাণকাজ করার কথা রয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৩৬০ কোটি টাকা।
শুরুতে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। ব্যয় বাড়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এরপরও কাজের অগ্রগতি না থাকায় দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, ১৯১ কোটি টাকার কাজ করছে তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান—মেসার্স আইএস ট্রেডিং, মেসার্স জে জে ট্রেডার্স ও এনকে ট্রেডার্স। এসব প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া ১৫৩ কোটি টাকার কাজ করছে অন্তত ৩৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে প্রায় ১৬ কোটি টাকার কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
কাজ শেষ করতে না পারার পেছনে প্রশাসন ও ঠিকাদারদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, সম্ভাব্যতা যাচাই না করে প্রকল্পটি নেওয়ার কারণে প্রতিটি ধাপে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া দলীয় ঠিকাদার হওয়ায় জটিলতা আরও বেড়েছে। বড় দুই ঠিকাদারই আত্মগোপনে চলে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করা পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল অনুষদের ডিন সুদীপ কুমার পাল সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে নির্মাণকাজ করানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যন্তরীণভাবে চুয়েট কর্তৃপক্ষ অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে প্রকল্পটি নিয়েছিল। তাঁর দাবি, ৬০ শতাংশ কাজ শেষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের হিসাবে কাজ হয়েছে সাকল্যে ৫০ শতাংশ।
বাকি কাজের জন্য এখন নতুন করে দুই বছর ও আরও ৪০ কোটি টাকার ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
পছন্দের ঠিকাদারে কাজ
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অদূরে রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নে চুয়েট ক্যাম্পাসের অবস্থান। চট্টগ্রাম-৬ আসন পড়েছে রাউজানে। এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
চুয়েটের জ্যেষ্ঠ পাঁচ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, চুয়েটে কে কী কাজ করবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতেন এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ও তাঁর অনুসারীরা। সাধারণত বাইরের ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নিতে পারতেন না।
নথিপত্র অনুযায়ী, প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি কাজ করছে মেসার্স আইএস ট্রেডিং ও মেসার্স জে জে ট্রেডার্স। তারা যৌথভাবে চারটি ও আলাদাভাবে পাঁচটি কাজ করছে। এতে মোট ব্যয় হচ্ছে ১০৯ কোটি টাকা। এখান থেকে মাত্র দুটির কাজ শেষ হয়েছে।
মেসার্স আইএস ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী পাহাড়তলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন। তিনি রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক। আওয়ামী লীগের পতনের পর এই ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন।
মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে না পারার পেছনে তদারকির অভাব ও প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিগত প্রশাসনের অজ্ঞতার কারণেই প্রকল্পের কাজ এগোয়নি। তাঁরা ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।