সিএমএম আদালত
সিএমএম আদালত

৬৯ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন, তবে মামলা রয়েছে

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন অন্তত ৭ এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তবে গতকাল শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সাতক্ষীরায় ৬৯ পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। জামিন হলেও মামলা থেকে অব্যাহতি পাননি এসব শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের আইনজীবী ও অভিভাবকেরা দ্রুত সম্ভব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মামলা মাথায় নিয়ে পরীক্ষায় বসা তাদের জন্য কঠিন হবে। পরীক্ষার আগে তারা এই চাপ নিতে পারবে না।

৭ এইচএসসি পরীক্ষার্থী কারাগারে

গত ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে পুলিশ রাজধানীর ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দুজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁদের গত জানুয়ারিতে ফতুল্লা মডেল থানার নাশকতা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁদের একজনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়ায়, অপরজন সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুই পরীক্ষার্থী কারাগার থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।

সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই দুজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা সিলেট সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তাঁরা বর্তমানে কারাগারে আছেন।

১৮ জুলাই মাগুরার ভায়না এলাকা থেকে মাগুরা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানায়, ১৮ জুলাই মাগুরা-যশোর মহাসড়কে মৎস্য ভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সেদিন রাতে মাগুরা সদর থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) শিমুল হালদার মামলা করেন। এতে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়। ওই মামলায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠান আদালত।

২৬ জুলাই বাবার কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার সময় রাজশাহী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে গত শনিবার নগরের মতিহার থানার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেদিন থেকেই তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার পরিদর্শক মো. সাহাবুল ইসলাম ওই শিক্ষার্থীর কারাগারে থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় এলাকায় ১৯ জুলাই বিকেলে বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে সদর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন লালমনিরহাটের আদিতমারীর সাকোয়ার মঞ্জিল টেকনিক্যাল কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে। ১৯ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি লালমনিরহাট জেলা কারাগারে আছেন।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সাতক্ষীরায় ৬৯ পরীক্ষার্থীর জামিন

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪১ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে গতকাল জামিন দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম। সিএমএম আদালতের বেঞ্চ সহকারী তানভীর রেজা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জামিন পাওয়া শিক্ষার্থীদের আইনজীবী সাইদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা অন্তত ৩৩টি মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে ৪১ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী কারাগারে আছেন। তাঁদের জামিন চেয়ে তিনি আদালতে আবেদন করেন। পরে আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।

এ ছাড়া ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, কেরানীগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন থানায় দায়ের করা চারটি মামলায় গ্রেপ্তার ছয়জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর জামিন দিয়েছেন আদালত।

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষ, নিহতের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার ১৬ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম আদালতে তাঁদের জামিন মঞ্জুর হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন রাত আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে ১৬ এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছেন। গতকাল তাঁদের জামিন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তার হওয়া ছয় এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দায়িত্বে থাকা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সালাউদ্দিন তাঁদের জামিন দেন। সাতক্ষীরা সদর থানায় জোর করে ঢোকার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১৮ জুলাই ওই ৬ জনসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আইনি সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন ঘিরে যেসব এইচএসসি পরীক্ষার্থী আটক হয়েছেন, তাঁদের জামিনের বিষয়ে আইনি সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আটকের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য একটি ই-মেইল খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে helphsc24@gmail.com ঠিকানায় মামলার নম্বর, আটক পরীক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের অনুলিপি এবং ঠিকানা দেওয়ার অনুরোধ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের মধ্যে যদি কেউ চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী থাকেন, তাঁরা পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রাদিসহ জামিন আবেদন করলে তাঁদের জামিনে মুক্তিতে সরকার আইনি সহায়তা দেবে। আটককৃত যেসব ছাত্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ নেই, তাঁদের জামিনের ক্ষেত্রেও সরকার আইনি সহায়তা দেবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]