সকালে এক রকম, বিকেলে তার ব্যতিক্রম। গতকাল অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে দিনের আলো ফোটার আগেই প্রভাতফেরির জনস্রোত শুরু হয়েছিল শহীদ মিনার অভিমুখে। বইমেলার ফটক খুলেছিল সকাল আটটায়। কিন্তু সকালে লোকসমাগম হয়নি।
লোকজন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে চলে যান। মেলায় উপস্থিতি ছিল নগণ্য। দুপুর ১২টার দিকে কিছু মানুষ আসতে থাকেন মেলায়। দুপুর থেকে বদলে যায় দৃশ্যপট। প্রতিটি প্রবেশপথে ভিড় বাড়তে থাকে। বেলা তিনটার দিকে মেলায় প্রবেশের জন্য টিএসসি ও রমনা কালীমন্দির প্রবেশপথের সামনে লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রীতিমতো জনারণ্য। সেই ভিড় ঠেলে মেলায় প্রবেশ করতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে, যাঁরা বিকেলে মেলার পথ ধরেছিলেন। তবে যানবাহনের জটলা নিয়ন্ত্রণে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ প্রশংসনীয় তৎপরতা দেখিয়েছে। এতে মেলায় আসা নগরবাসীর দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়েছে।
লোকজন দল বেঁধে স্টলের সামনে–পেছন দাঁড়িয়ে সেলফি বা গ্রুপ ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। কিছু বলাও যায় না। কেউ কেউ হয়তো দু-একটি বই হাতে নেন, তা–ও ছবি তোলার জন্য। ছবি তোলা হয়ে গেলে বইটা রেখে চলে যান। এই প্রকাশক বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করলেন, ‘সেলফোন অনেক মানুষকে কাণ্ডজ্ঞানহীন করে ফেলেছে।আপন প্রকাশনীর প্রকাশক হুমায়ূন রহমান
যত লোক তত বিক্রি নয়
যে বিশাল জনস্রোত নেমেছিল মেলায়, সেই অনুসারে বিক্রি বাড়েনি, একুশের দিনে সাধারণত এমনই হয় বলে জানান, প্রকাশক ও তাঁদের ব্যবস্থাপকেরা। অবসরের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি মেলায় তাঁদের প্যাভিলিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দেখেছেন, একুশের দিনে মানুষ মূলত বেড়ানোর উদ্দেশেই মেলায় আসেন। বইয়ের ক্রেতা থাকে কম। একই ধরনের মন্তব্য করলেন বিদ্যাপ্রকাশের প্রকাশক মজিবর রহমান ও ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন। লোকের চাপ এত বেড়েছিল যে বিকেল পাঁচটার পর থেকে স্টলে এসে ভালো করে বইপত্র দেখতেই তাঁদের অসুবিধা হচ্ছিল। তবে একুশের পর থেকে মেলার শেষ দিন অবধি সাধারণত বিক্রি ভালো হয়। তাঁরা আশা করছেন, এবারও তা–ই হবে।
আপন প্রকাশনীর প্রকাশক হুমায়ূন রহমান বলেন, ‘লোকজন দল বেঁধে স্টলের সামনে–পেছন দাঁড়িয়ে সেলফি বা গ্রুপ ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। কিছু বলাও যায় না। কেউ কেউ হয়তো দু-একটি বই হাতে নেন, তা–ও ছবি তোলার জন্য। ছবি তোলা হয়ে গেলে বইটা রেখে চলে যান। এই প্রকাশক বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করলেন, ‘সেলফোন অনেক মানুষকে কাণ্ডজ্ঞানহীন করে ফেলেছে।’
জনজোয়ারের পরে আজ বিকেল থেকে মেলায় আবার ফিরবে নিরিবিলি পরিবেশ। যাচাই–বাছাই করে বই কোনার জন্য সময়টা ভালো।
নতুন বই
গতকাল তথ্যকেন্দ্রে নতুন বইয়ের নাম এসেছে ২৩৪টি। গতকাল প্রথমা প্রকাশনের উপন্যাসগুলো ভালো বিক্রি হয়েছে বলে জানান প্যাভিলিয়নের ব্যবস্থাপক। এ ছাড়া নতুন ও আগের যেসব বইয়ের কাটতি বেশি ছিল, তার মধ্যে আছে মঈনুস সুলতানের ভ্রমণকাহিনি বলকানের তুর্কি হামাম, আবুল মোমেনের শিক্ষার শত শিখা, বদরুল আলম খানের ইরান: খোমেনির ইসলামি বিপ্লব ও তারপর, রায়হান রাইনের কথাপুষ্প: প্রজ্ঞাবানদের বলা গল্প।
এবার মেলায় অন্য নতুন বইয়ের মধ্যে ঐতিহ্য এনেছে আসাদুজ্জামান নূরের আত্মকথা নিরালা নীলে, তাম্রলিপি এনেছে কার্জন শেখ হাফিজুরের উপন্যাস অর্ধেক উপন্যাস, বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মোশারফ হোসেন ভুঁইয়ার প্রবন্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি, জার্নিম্যান এনেছে আবুল কাশেমের উপন্যাস শিকিবু, অ্যাডর্ন এনেছে নাজমুল আহসান শেখের বাংলাদেশের অভ্যুদয় সিরাজুল আলম খান, অন্যপ্রকাশ এনেছে মোকারম হোসেনের প্রকৃতিবিষয়ক বিচিত্র উদ্ভিদের ভেষজগুণ, সাহস পাবলিকেশন এনেছে মোস্তাফিজ কারিগরের শিক্ষাবিষয়ক গবেষণা শিক্ষামন্ত্র, অনার্য এনেছে মাহবুবুর রহমান তুহিনের প্রবন্ধ সময়ের সংলাপ, খুশবু এনেছে লুৎফর রহমান রিটনের ছড়া বেড়াল ছানা ফোন করেছে কুকুর ছানার মাকে, চন্দ্রাবতী এনেছে আনজীর লিটনের উপন্যাস স্টেশনের নাম প্রজাপতি, পাঞ্জেরী এনেছে সারওয়ার-উল-ইসলামের নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস।
জনজোয়ারের পরে আজ বিকেল থেকে মেলায় আবার ফিরবে নিরিবিলি পরিবেশ। যাচাই–বাছাই করে বই কোনার জন্য সময়টা ভালো।