রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আজ রাত ১০টার দিকে বাঁধের স্পিলওয়ে (জলকপাট) পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে বলে জানায় কর্ণফুলী বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। রাতে বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার খবরে তৎপর হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কর্ণফুলী নদী ও শাখা খালে তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। রাত থেকে নদীতে মাছ ধরতেও নিষেধ করা হচ্ছে। কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়ে ছাড়ার খবরে নদীর তীরবর্তী অনেক বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। অনেকে সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার আগে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে নদী–তীরবতী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সরে যেতে বলা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় স্কুলগুলোকে আশ্রয়ণ কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। মাইকিং হচ্ছে এলাকাগুলোতে।
শস্যভান্ডার খ্যাত গুমাইবিলে এমনিতে রোপা আমন কয়েক দিন ধরে পানির নিচে। কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়লে বিলে পানি ঢুকে ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, পানি আরও কয়েক দিন থাকলে বন্যা–সহনশীল জাত ছাড়া অন্য ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি ও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ১০৭ দশমিক ৬৬ ফুট এমএসএল। যা বিপৎসীমার কাছাকাছি। হ্রদের উজান ও ভাটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে রাত ১০টার দিকে বাঁধের স্পিলওয়ের ১৬টি ফটক পানিনিষ্কাশনের জন্য ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হবে। এতে ৯ হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হবে।
কনর্ফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) এ টি এম আব্দুজ্জাহের বলেন, ‘হ্রদের পানির প্রবাহ (ইনফ্লো) ও বৃষ্টিপাত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইনফ্লো বেশি হলে অর্থাৎ পানির স্তর অস্বাভাবিক বাড়লে স্পিলওয়ের খোলার পরিমাণ বাড়ানো হবে। বর্তমানে ৫টি ইউনিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। যার কারণে ৩২ হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। বর্ষাকালে হ্রদে অতিরিক্ত পানি বাড়লে বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার পর কর্ণফুলী নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। নদীতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি হয়। রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা এলাকায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।