ফরিদপুর ১২ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে সব বাধা উপেক্ষা করে বড় জনসমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান ও মো. সেলিমুজ্জামান, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক নায়াব ইউসুফ প্রমুখ। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নেতারা গণসমাবেশস্থলের মাঠটি পরিদর্শন করেন।
আজ সকাল থেকে শহরের থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ বাস্তবায়ন করছে ফরিদপুরের লাকী ডেকোরেটর। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ওই ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠানের ১০ শ্রমিক।
লাকী ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী শেখ সালাম বলেন, মঞ্চ হবে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট। মঞ্চে ৬০টি চেয়ার দেওয়া হবে। মঞ্চটি হবে সাদা কাপড়ের। মাঠে প্রবেশের দুটি পথে দুটি তোরণ নির্মাণ করা হবে। এই কাজের জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছে।
এই গণসমাবেশের সমন্বয়কারী শামা ওবায়েদ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফরিদপুর জেলা ছাড়াও এ সমাবেশে রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা আসবেন। তাঁদের বলা হয়েছে, বাসসহ সব পরিবহন বন্ধ থাকবে, এ কথা মাথায় রেখেই সমাবেশে যোগ দিতে হবে। যাঁরা আগেই চলে আসবেন, তাঁদের থাকা ও খাওয়ার প্রস্তুতি তাঁরা নিয়ে রেখেছেন।
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সমাবেশে আসার সময় পথে পথে বাধা, হামলার ঘটনা অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও ঘটবে বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি এটাও বিশ্বাস করি, যত বেশি বাধা, তত বেশি মানুষের সমাবেশ ঘটে। অন্যান্য সমাবেশে তা-ই ঘটেছে।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন বলেন, সমাবেশস্থলের আশপাশে বিভিন্ন বাড়ি ও মাঠে লোকজনের থাকা-খাওয়া ও শৌচকার্যের ব্যবস্থা থাকবে। পর্যাপ্ত তাঁবু থাকবে। আগে আসা লোকদের কোনো সমস্যা হবে না। ১১ ও ১২ নভেম্বর পরিবহন ধর্মঘট থাকবে বলে তাঁরা ধারণা করছেন, তাই আগে থেকেই অনেকে চলে আসবেন।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদাদ হোসাইন বলেন, শহরে নিরাপত্তার স্বার্থেই বিএনপিকে শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশনের মাঠে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশস্থল ও শহরের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। ফরিদপুরে প্রবেশের প্রতিটি জায়গায় পুলিশের নজরদারি থাকবে, থাকবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা। সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হবে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে পুলিশ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে আবাসিক হোটেল ও খাবারের রেস্তোরাঁ বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এদিকে বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ফরিদপুরে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। বিএনপির আগুন-সন্ত্রাস, ভাঙচুর, নৈরাজ্য ও দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিবাদে এ মিছিলে ১০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর উপস্থিতি দেখাতে চায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। এই মিছিল শেখ রাসেল স্কয়ার থেকে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে যাবে এবং সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দেবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, ‘আমাদের মিছিল মূলত শান্তির বার্তা দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি এটাও জানানো, ফরিদপুরে আমরাও আছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচির দিন আমরা রাস্তায় থাকব না। তাহলে বাধা দেওয়ার প্রশ্ন আসে কীভাবে? আমাদের ওপর যদি কেউ আঘাত না করে, আমরা কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নেব না।’