সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটার একজন বিদ্যালয় শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, লুটপাটের পর তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর তাঁকেও পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে বিভিন্ন নম্বর থেকে মুঠোফোনে কল দিয়ে চাঁদা দাবি ও জমি জবরদখলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আশাশুনি উপজেলার একজন মৎস্যঘের ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
তালার ঘটনার ভুক্তভোগীর নাম পার্থ চক্রবর্তী। তিনি পাটকেলঘাটার ধানদিয়া গ্রামের এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পার্থ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ বিঘা জমি তাঁর। প্রায় তিন বিঘা জমির ওপর বাড়িটি করেছেন। এক প্রতিবন্ধী ছেলেসহ পাঁচজনের সংসার তাঁর। গত মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে সীমানাপ্রাচীর টপকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন ধানদিয়া সরদারপাড়ার ফিরোজ সরদার ও শামীম সরদার নামের দুই ব্যক্তি। তাঁদের হাতে থাকা হাতুড়ি ও কুড়াল দিয়ে বৈদ্যুতিক মোটর ভাঙা হয় ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। প্রাচীরের দুটি ফটকের তালা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ঘরে ঢুকে ৩০-৪০ জন হাতে থাকা দা, কুড়াল, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে একে একে চালের ড্রাম, টিভি, ফ্রিজ, দরজা, আলমারি, টয়লেটের প্যান, গ্যাসের চুলাসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে। আলমারি থেকে লুট করা হয় দেড় লাখের বেশি টাকা, চার ভরি সোনার গয়না ও বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস। ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় পার্থ চক্রবর্তীর স্ত্রী কাকলী চক্রবর্তীর ডান পায়ে কোপ মারা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া তাঁকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে ঘরের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। এরপর দুর্বৃত্তরা পেট্রল ছিটিয়ে ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘরের জিনিসপত্র পুড়ে যায়। চিৎকার শুনে একই গ্রামের মানুষজন ছুটে এলে হামলাকারীরা চলে যায়।
শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, প্রাচীরঘেরা বাড়ির উঠান থেকে বারান্দা ও ঘরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে পোড়া কাপড়, পোড়া মোটর, চালের ভাঙা ড্রাম, টয়লেটের কমোড, কুড়াল দিয়ে কোপানো ফ্রিজ, ভাঙা আলমারি, ভাঙা দরজা, হাঁড়ি–পাতিলসহ বিভিন্ন জিনিস।
আশাশুনি উপজেলার শ্বেতপুর গ্রামের মৎস্যঘের ব্যবসায়ী সুবল সরকার বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের নিচতলার বারান্দার একটি শয্যায় শুয়ে ছিলেন। সেখানে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর কয়েকজন তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন জানিয়ে বলেন, মঙ্গলবার রাকিব, শাহাদাৎ, রমজান, ছাত্তার, ছালাম, নফুরসহ কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে বাড়ির বাইরে ডাকেন। তাঁর কাছে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন ওই ব্যক্তিরা তাঁকে লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করেন। স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তবে তাঁর বাঁ পা ও বাঁ হাত ভেঙে গেছে। ডান হাত ও ডান পায়ে আঘাত করা হয়েছে। থেঁতলে দেওয়া হয়েছে শরীরের বিভিন্ন অংশ। তিনি বলেন, শ্বেতপুর বিলে তাঁর ২৫ বিঘার মৎস্যঘের আছে। ওই ঘেরটি লুট করবে বলে হুমকি দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা।