আওয়ামী লীগের মনোনয়নের কথা বলে ২০ কোটি টাকা চেয়ে ফোন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের কথা বলে ২০ কোটি টাকা চাওয়ার ঘটনায় নোয়াখালী থেকে এই বাবা–মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত

‘আমি গণভবন থেকে বলছি, আপনার মনোনয়নের ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা আছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী হিসেবে আপনাকে দলের তহবিলে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। টাকা প্রস্তুত রাখবেন। যেকোনো মুহূর্তে দলের তহবিলে টাকা জমা দিতে বললে তাৎক্ষণিকভাবে জমা করে দেবেন। টাকা জমা দেওয়ার পর আপনার মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে।’ মুঠোফোনে একজন সংসদ সদস্যকে এ কথা বলেন মো. ইয়াছিন (৪৬) নামের এক ব্যক্তি। ওই সংসদ সদস্য এ বছরও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

গণভবনের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইয়াছিন গত মঙ্গলবার ওই সংসদ সদস্যকে ফোন করেন। মনোনয়নের জন্য দলের তহবিলের জন্য ২০ কোটি টাকা চাওয়ার নিয়ে ওই সংসদ সদস্যের সন্দেহ হলে তিনি আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে বিষয়টি জানান। তখন ওই কেন্দ্রীয় নেতা বুঝতে পারেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) বলেন তিনি। তদন্তে নেমে ডিবি গতকাল বৃহস্পতিবার নোয়াখালী থেকে মো. ইয়াছিন ও তাঁর মেয়ে সুরাইয়া ইয়াছিনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় ওই সংসদ সদস্যের পক্ষে মানছুরুল আউয়াল শাফী নামের এক ব্যক্তি আজ শুক্রবার ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে কখনো ইয়াছিন, আবার কখনো তাঁর মেয়ে সুরাইয়া মনোনয়নপ্রত্যাশী বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোন করে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করছিলেন। তাঁরা কয়েকজনের কাছ থেকে অল্প কিছু টাকাও নিয়েছেন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন–অর–রশীদ বলেন, বাবা–মেয়ে পেশাদার প্রতারক। তাঁরা বিভিন্ন সময় সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি, বিদেশে পাঠানোর নামে অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে, তখন তাঁরা মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করছিলেন। এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এই প্রতারক চক্রের ফোন পেয়ে কেউ কেউ তাঁদের টাকা দিয়ে ফেলেছেন। আবার কেউ কেউ টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ডিবি সূত্র জানায়, নির্বাচন এলেই প্রতারকেরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা তুলে নিতেন। এসব প্রতারকের কারও কারও সঙ্গে সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের ছবি রয়েছে। এসব ছবি দেখিয়ে তাঁরা মানুষকে ‘ফাঁদে’ ফেলেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবা-মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ইয়াছিনের বাড়ি নোয়াখালী। একসময় তিনি ঢাকার নবাবগঞ্জে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। পরে তিনি প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। ইয়াছিনের মেয়ে সুরাইয়ার বিয়ে হয়েছিল। কয়েক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হলে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরে বাবার সঙ্গে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন।