বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি সংস্কার করে বহাল রাখতে হবে। দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) চালু করতে হবে। প্রতিটি গণ-অভ্যুত্থানসহ এ দেশের প্রত্যেকটি অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যেই ছাত্র সংগঠনগুলো সামনে ছিল, ক্যাম্পাসে সেই ছাত্র সংগঠনগুলোকে থাকতে দিতে হবে।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ: সংস্কারের রূপরেখা’ শীর্ষক সংলাপে এমন মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সব ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা। ‘সোশ্যাল সায়েন্স ইন প্র্যাক্সিস (এসএসপি)’ নামের একটি সংগঠন এ সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সূর্যসেন হল শাখার সহসভাপতি ওয়াসি উদ্দিন তামী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠক নাইমুদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হোসাইন আহমেদ জোবায়ের, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন প্রমুখ।
সংলাপে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্ররাজনীতির জন্য বয়সসীমা ঠিক করে দিতে হবে। বয়সসীমা থাকলে অছাত্ররা ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ছাত্রসংগঠনগুলো কাজ করবে।
ছাত্রদল নেতা ওয়াসি উদ্দিন তামী বলেন, সংবিধান অনুসারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সভা- সমাবেশ করার স্বাধীনতা সবার আছে। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে ত্যাগের জায়গায় সবার আগে ছাত্রনেতারাই থাকবেন। তাই ছাত্ররাজনীতির বিকল্প নেই; দুঃসময় ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই।
ছাত্রদলের এই নেতা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের শোডাউনের রাজনীতিকে আর প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম, গেস্টরুম এবং র্যাগিংয়ের বিপক্ষে অবস্থান নেবে ছাত্রদল।
ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মেঘমল্লার বসু বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন কখনো দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করে না। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে গেলে শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ হবে না। কারণ, শিক্ষকেরা দলের নাম দিয়ে রাজনীতি করে না। তিনি ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করারও দাবি জানান।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা মোজাম্মেল হক বলেন, অন্যায়-অবিচারের বিপক্ষে প্রতিবাদ করার জন্য সংগঠনভিত্তিক রাজনীতি জরুরি। সমচিন্তার মানুষের এক হওয়া সাংবিধানিক অধিকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতার অজুহাতে কেউ কারও অধিকার যেন ক্ষুণ্ন করতে পারে না।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা হোসাইন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বৈধ আসন নিশ্চিত, নারীদের নিরাপত্তাহীনতা দূর করা, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতা করা এবং ভিন্ন রূপে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসা প্রতিহত করার জন্য আমরা ক্যাম্পাসে কাজ করে যাব। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ গড়ব।’
সংলাপে নির্দলীয় প্রতিনিধি নিশিথা জাহান নিহা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। বিগত ১৫ বছরে একটি সংগঠনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়নি। আগামী দিনে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় রাজনীতি থেকে ছাত্ররাজনীতি আলাদা করতে হবে। ডাকসুর অথোরিটি শিক্ষার্থীদের দিতে হবে। ডাকসুতে নারীদের প্রতিনিধি থাকতে হবে।’
নির্দলীয় প্রতিনিধি তাজিনা তামিম হাফসা বলেন, ‘রাজনীতি অবশ্যই থাকবে, তবে তা হবে ডাকসুভিত্তিক। ছাত্ররাজনীতি এজেন্ডা হবে ছাত্রদের নিয়ে কাজ করা। নারীদের অধিকার নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সংলাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ এবং সহকারী প্রক্টর শেহেরীন আমিন ভুইয়া।