‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত গান। বলিউডে নির্মিত হিন্দি ছবি ‘পিপ্পা’য় গানটির রিমেকে সুর দেন ভারতীয় সুরকার এ আর রাহমান। রিমেকে গানের সুর বিকৃত করার অভিযোগ ওঠে।
এ আর রাহমানের রিমেক করা ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গানের সংস্করণ ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ওটিটি প্ল্যাটফর্মসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে সমন্বয়ক ও সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী আবেদনকারী হয়ে গত ৬ ডিসেম্বর ওই রিট করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির, সঙ্গে ছিলেন সোলায়মান তুষার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ আর রাহমানের বিকৃত সুরে পরিবেশিত “কারার ঐ লৌহ-কবাট” গানের সংস্করণ ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ওটিটি প্ল্যাটফর্মসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অবিলম্বে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ছয় মাসের জন্য অপসারণের আদেশ বহাল থাকবে।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বলিউডে নির্মিত হিন্দি ছবি ‘পিপ্পা’য় ব্যবহৃত হয় কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানটি। আর এ গানের রিমেকের সংগীতায়োজন করেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার এ আর রাহমান। কিন্তু গানে নতুন করে এ আর রাহমান সুরারোপ করায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে নজরুল-ভক্তদের মধ্যে। বাংলাদেশ ও ভারতে দাবি ওঠে, অবিলম্বে ওই চলচ্চিত্র থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে বিকৃত করে সুর দেওয়া ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানটি। ১০ নভেম্বর ‘পিপ্পা’ ছবিটি মুক্তি পায় ওটিটিতে।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের কারাবরণের পর ১৯২১ সালে তাঁর পত্রিকা ‘বাঙ্গলার কথা’র জন্য ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ কবিতা হিসেবে লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২৪ সালে ‘ভাঙার গান’ বইটিতে ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’-এর প্রকাশ ঘটে। সে বছরই ১১ নভেম্বর বইটি নিষিদ্ধ করে ব্রিটিশ সরকার। তা আবার প্রকাশিত হয় স্বাধীন ভারতে, বিদ্রোহী কবি যখন বাকরুদ্ধ, অসুস্থ!
এ বিষয়ে গত নভেম্বরে কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি অনিন্দিতা কাজী ফেসবুকে নিজের মন্তব্য তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ‘আমি অনিন্দিতা কাজী, কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি। দাদুর “কারার ঐ লৌহ–কবাট” গানটির সুরবিকৃতি ঘটিয়েছেন বিশিষ্ট গীতিকার–সুরকার শিল্পী এ আর রাহমান। বিশ্বজুড়ে বিতর্কের ঝড়, তোলপাড়। আমার মা কল্যাণী কাজী, যার বেঁচে থাকাই ছিল নজরুলকে নিয়ে, নজরুলকে ঘিরে, নজরুলকে তিনি ধারণ করেছিলেন...তিনি ২০২১ সালে গানটি অবিকৃত রেখে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন বলে জানতে পারি। কিন্তু এর পরিণতি এমন হবে, তিনি মৃত্যুর পরেও ভাবতে পারেননি বোধ হয়।’