মূল অভিযুক্ত কাশেম জিহাদি
মূল অভিযুক্ত কাশেম জিহাদি

কাশেম জিহাদিসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগপত্র

লক্ষ্মীপুরে আলোচিত যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের খুনের মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। প্রায় এক বছর দুই মাস পর আজ বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া লক্ষ্মীপুর কোর্ট পুলিশ ইন্সপেক্টরের কার্যালয়ে এই অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে জেলার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা কাশেম জিহাদিসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়।

কোর্ট পুলিশ ইন্সপেক্টর সফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দিয়েছেন। মামলার ধার্য তারিখে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবু ইউসুফের আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। আদালত তখন পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন।

আলোচিত এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে পুলিশ একজনকে অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে। এ ছাড়া তদন্তে ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রমাণিত হওয়ার পর নতুন করে আরও ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এ নিয়ে মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়াল ৩২।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে যাঁদের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাঁদের আসামি করা হয়েছে। তদন্তে প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদিসহ ৩২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকার নাগেরহাট সড়কে ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নোমান জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং রাকিব জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাতে নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে আবুল কাশেম জিহাদিকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামি করা হয়।

আবুল কাশেম জিহাদি চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। খুনের ঘটনার প্রায় এক মাস পর তাঁকে বহিষ্কার করে দল। লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রধান অভিযুক্ত আবুল কাশেম জিহাদি ধরাছোঁয়ার বাইরে।

মামলার বাদী ও নিহত আবদুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ তদন্তের পর অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কাশেম জিহাদি এখনো মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।’

নিহত নোমান ও রাকিবের স্বজনেরা বলছেন, প্রধান আসামি কাশেম জিহাদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় তাঁরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন তাঁরা আশায় থাকেন, ভাই হত্যার প্রধান আসামি ধরা পড়বেন। কিন্তু ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও কাশেম জিহাদিসহ ছয়জনকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। অথচ জিহাদি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস রেকর্ড ও কল করে অনবরত হুমকি দিচ্ছেন।

মামলার বাদী ইউপি চেয়ারম্যান ও নিহত নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গত দুই মাস আগেও কাশেম জিহাদি মুঠোফোনে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী কাশেম জিহাদি মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মুঠোফোনে কথা বলছেন। আর আমরা অসহায়ের মতো দেখছি।’