পেঁয়াজ-আলুর দাম নিয়ে সমালোচনা মেনে নিয়ে কৃষিমন্ত্রী চালের ‘ভালো’ পরিস্থিতি তুলে ধরতে বললেন

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক
ফাইল ছবি

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সব বিবেচনায় এ বছর চাল উৎপাদন, বিতরণ ও মানুষের খাদ্যনিরাপত্তায় দেশ একটি ভালো অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণের অনুরোধ জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সমালোচনা করেন, আমরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, আলুর দাম পারছি না, সেটি (সমালোচনা) আমরা নিচ্ছি (মেনে)। সেটা আমাদের দুর্বল দিক। কিন্তু আমাদের যেটি সবল দিক (চালের ভালো পরিস্থিতি), সেটিও আপনারা দয়া করে মিডিয়ায় তুলে ধরুন।’

আজ রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। সভায় আসন্ন আমন মৌসুমে মোট সাত লাখ মেট্রিক টন চাল ও ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৪ লাখ টন সেদ্ধ চাল কেনা হবে ৪৪ টাকা কেজি দরে ও ১ লাখ টন আতপ চাল কেনা হবে ৪৩ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া ২ লাখ টন ধান কেনা হবে ৩০ টাকা কেজি দরে। ধান-চাল সংগ্রহের এই তথ্য জানান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভরা কার্তিকেও চাল আমদানি করতে হয়নি। গত বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই লাখ টনের বেশি চাল সংগ্রহ করা হয়। এই মুহূর্তে চালের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে। অনেক কৃষিপণ্যের দাম একটু অস্বাভাবিক বেশি বলে গণমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেশি। সব মিলিয়ে একজন মানুষ জীবনধারণের জন্য যে খাদ্য খেয়ে থাকেন, তার মধ্যে চালের ওপর খরচ হয় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। কাজেই খাদ্যের প্রথম ও প্রধান উপাদান চাল। চাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কি হাল ছেড়ে দিয়েছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মোটেই হাল ছেড়ে দিইনি। আমরা এখনো যথেষ্ট তৎপর। উৎপাদনের অংশটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের। বাজারের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারপরও একটি সরকার, আমি দায়িত্ব এড়াতে পারি না। ক্যাবিনেট সিস্টেমে সব মন্ত্রী এটার জয়েন্ট রেসপনসিবিলিটি, সব সময়ই এটা।...কাজেই আমরা মোটেই হাল ছেড়ে দিইনি, আমরা চেষ্টা করছি।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, হিমাগারের (কোল্ডস্টোরেজ) মালিকেরা খুবই অসহযোগিতা করছেন। তাঁরা ঠিকমতো সরবরাহ করছেন না, এটা একটি বড় অন্তরায়। নানাভাবে কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে তাঁদের চাপ সৃষ্টি করলে জোগান দেন না, বন্ধ করে চলে যান। এ ধরনের কিছু ব্যাপারও রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজ দেশে পর্যাপ্ত হয়, কিন্তু পেঁয়াজ খুবই পচনশীল কৃষিপণ্য। এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়াজ তোলা হয়, তারপর দুই মাসের বেশি থাকে না। পেঁয়াজ পচে যায়, শুকিয়ে যায়। এ জন্য পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গত বছর দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজ হয়েছিল, কৃষকেরা বিক্রি করতে পারেননি। আলুরও সেই একই অবস্থা। সাংবাদিকেরাই প্রতিবেদন করেছেন, আলু রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। এ বছর উল্টো পরিস্থিতি। দুই-তিন লাখ টন (আলু) কম হয়েছে, এই সুযোগে কোল্ডস্টোরেজের মালিক এবং আড়তদারেরা ব্যাপকভাবে মুনাফা করছেন। এত তো লাভ করা উচিত নয়।

পেঁয়াজ সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছে বলেন জানান কৃষিমন্ত্রী। রাজশাহী, পাবনা ও ফরিদপুরে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে পেঁয়াজ রাখলে ৫ শতাংশও পচে না। এই প্রযুক্তি যদি আমরা (সারা দেশে) নিয়ে যেতে পারি, আগামী দুই বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না।

বাংলাদেশে সংরক্ষণ করতে পারব। সেই প্রযুক্তি পেয়ে গেছি এবং এমন জাত (পেঁয়াজের) আমরা পেয়েছি, আমাদের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন, হেক্টরে ৪০ থেকে ৫০ টন পেঁয়াজ হয়। আলু নিয়েও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আলু অনেক বেশি উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট...এই পরিস্থিতি হয়েছে। পেঁয়াজেও আগামী দিনে বাংলাদেশে কোনো সমস্যা থাকবে না।’