আখতারুজ্জামান ইলিয়াস মহৎ সাহিত্যিক হিসেবে কালজয়ী হয়ে থাকবেন

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা
ছবি: প্রথম আলো

আমাদের কথাসাহিত্যে ভিন্নতা অন্বেষণে ব্রতী হয়েছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। প্রচলিত কাঠামোর বাইরে গিয়ে তিনি উপন্যাস ও গল্পে জীবন ও সমাজকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা অনন্য। সংখ্যার বিচারে তাঁর লেখা অল্প। মাত্র ২টি উপন্যাস, প্রায় ৩০টি গল্প এবং ১টি প্রবন্ধের বই। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই তিনি বাংলাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, ভাবনাকে প্রসারিত করেছেন। একটি স্বতন্ত্র গদ্যশৈলী সৃষ্টি করেছেন। বাংলা ভাষার মহান ঔপন্যাসিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম হিসেবে কালজয়ী হয়ে থাকবেন।

রোববার বিকেলে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা তাঁর সম্পর্কে এই মূল্যায়ন করেছেন। রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডের কবিতা ক্যাফেতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফিট্স ফাউন্ডেশন। অনেকটাই ঘরোয়া আঙ্গিকের এই আয়োজনে ছিল ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কথাসাহিত্যে জীবন ও সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা। সূচনা ভাষ্য দেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গবেষক ও আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ইলিয়াস তাঁর সময়ের প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাহিত্যের একটি নতুন প্রবণতা ও আঙ্গিকের সৃষ্টি করেছেন। সমাজের বিবর্তন ও সাধারণ মানুষের ভাষ্যকে এই নতুন আঙ্গিকে বয়ান করেছেন, যা মহাকাব্যিক। তিনি স্বতন্ত্র, তিনি মহৎ লেখকদের একজন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিশু একাডেমির মহাপরিচালক ছড়াকার আনজীর লিটন বলেন, ইলিয়াসের লেখা সম্পর্কে যখন আলোচনা হয়, তখন সাধারণত তাঁর শিশুতোষ লেখাগুলো বাদ পড়ে যায়। এতে তিনি খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত হন। শিশুদের জন্যও তাঁর অসাধারণ কাজ আছে, এগুলো প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

মৃত্যুর পরে হলেও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করার দাবি উঠেছে আলোচনায়

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ যেকোনো বিচারে বিশ্বমানের উপন্যাস। তিনি এর জন্য দীর্ঘ বাক্য, পূর্ববঙ্গের বাক্‌ভঙ্গি, শব্দ এসব মিলিয়ে নিজস্ব গদ্যরীতি সৃষ্টি করেছেন। বড়মাপের সাহিত্যিক কোনো দেশেই কোনো কালে খুব বেশি আসেন না, ইলিয়াস আমাদের ভাষার তেমনই একজন অনেক বড় মাপের সাহিত্যিক।

মূল প্রবন্ধ পড়েন লেখক অপূর্ব শর্মা। তাতে তিনি বলেন, গল্প–উপন্যাসে তিনি সাধারণ মানুষকে উপজীব্য করেছেন। জীবনের সত্যকে নির্মমভাবে উপস্থাপন করেছেন।

আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারিক মনজুর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিলটন বিশ্বাস, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামসুদ্দিন চৌধুরী, কবি মাসুদুল হক, ফারুক সুমন ও সঞ্জীব পুরোহিত। সভাপতিত্ব করেন আকমল হোসেন।

বক্তারা বলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো সাহিত্যিক কোনো পদক পাননি। তাঁকে সম্মানিত করতে না পারা আমাদেরই দীনতার প্রকাশ। মৃত্যুর পরে হলেও তাকে মরণোত্তর একুশে বা স্বাধীনতার পদকে ভূষিত করার দাবি করেন তাঁরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে শোনান শিল্পী আক্তার, সঞ্চালনা করেন নাহিদা আশরাফি।