১৫টি বিভাগে রোগী দেখা হচ্ছে
এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও ল্যাবরেটরি চালু
মানসম্পন্ন চিকিৎসার ঘাটতি কিছুটা দূর করতে চায় বিএসএমএমইউ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ১৫টি বিভাগ চালু হয়েছে। চালু হওয়ার পর থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ইতিমধ্যে এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করা শুরু হয়েছে। ল্যাবরেটরির পরীক্ষাও চলছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনবল নিয়োগ শেষ হলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করার পর রোগী ভর্তি শুরু হবে। বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী হাসপাতাল পরিচালনা করা সম্ভব হলে এটি হবে দেশের সেরা সেবাকেন্দ্র। সেবা নেওয়ার জন্য করপোরেট হাসপাতালে বা বিদেশে যাওয়ার দরকার হবে না।
দেশে মানসম্পন্ন চিকিৎসার ঘাটতি আছে। সেই ঘাটতি কিছুটা দূর করতে চায় বিএসএমএমইউ।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের আর্থিক সহায়তায় রাজধানীর শাহবাগে মূল বিএসএমএমইউয়ের উত্তর পাশে ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পশ্চিম পাশে গড়ে ওঠা এই হাসপাতাল গত বছরের ২২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যৌক্তিক মূল্যে বেসরকারি পাঁচ তারকা হাসপাতালের মতো বা তার চেয়ে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য এই হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় জনা বিশেক রোগী অপেক্ষা করছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী থাকে। হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ও হৃদ্রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রসুল আমিন এই প্রতিবেদককে হাসপাতাল ঘুরিয়ে দেখান। রেডিওলজি ও ইমেজিং শাখায় গিয়ে দেখা যায় স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত এমআরআই করার জন্য।
বিশেষায়িত এ হাসপাতালকে পাঁচটি কেন্দ্রে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—জরুরি চিকিৎসা ও ট্রমা কেন্দ্র, কিডনি রোগ ও প্রতিস্থাপন কেন্দ্র, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ ও স্ট্রোক কেন্দ্র এবং হেপাটোবিলিয়ারি, পেনক্রিয়াটিকস, হেপাটোলজি ও যকৃত প্রতিস্থাপন কেন্দ্র।
এ পাঁচটি কেন্দ্রের আওতায় বর্তমানে ১৫টি বিভাগের বহির্বিভাগ চালু হয়েছে। এর মধ্যে আছে: প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ, শিশু স্বাস্থ্য, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, রেস্পিরেটরি মেডিসিন, হৃদ্রোগ, কার্ডিয়াক সার্জারি, নিউরোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, হেপাটোলজি, হেপাটোবিলিয়ারি ও পেনক্রিয়াটিকস, অর্থপেডিকস ও ট্রমা, চক্ষুরোগ, সার্জিক্যাল অনকোলজি এবং নিউরোসার্জারি।
২২ ডিসেম্বর চালু হওয়ার পর ওই মাসে বিভিন্ন বিভাগে মোট ৮৬ জন চিকিৎসা নেন। জানুয়ারিতে চিকিৎসা নেন ২ হাজার ৬০২ জন এবং চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনে চিকিৎসা নেন ৩ হাজার ৩৪৭ জন। অর্থাৎ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ সময় এমআরআই করেছেন ৯৩ জন, সিটি স্ক্যান করেছেন ৩৯ জন। কর্মকর্তারা বলেন, দিনে ৪০ জনের এমআরআই করার সক্ষমতা তাঁদের আছে।
দুই পালায় বহির্বিভাগে রোগী দেখা হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রথম পালা। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দ্বিতীয় পালা। মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রোগী দেখার জন্য সময় বরাদ্দ মোটামুটি ঠিক করে দিয়েছি। একজন চিকিৎসক এক পালায় ২০ জনের বেশি রোগী দেখবেন না। একজন রোগীকে ১০ মিনিটের মতো সময় দিতে হবে। চিকিৎসকেরা সময় নিয়ে রোগী দেখেন না বলে যে অভিযোগ আছে, আশা করি, সেই অভিযোগ থাকবে না।’
রোগী দেখবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক। মেডিকেল অফিসারদের রোগী দেখার কোনো সুযোগ এখানে থাকছে না। সকালের পালায় অধ্যাপক ৬০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৪০০ টাকা ও সহকারী অধ্যাপক ৩০০ টাকা ফিতে রোগী দেখেন। আর বিকেলের পালায় তা ১ হাজার টাকা, ৭০০ টাকা ও ৫০০ টাকা। এ টাকার ৬০ শতাংশ পাবেন চিকিৎসক এবং বাকি ৪০ শতাংশ জমা হবে হাসপাতালের তহবিলে। চিকিৎসকদের প্রতি মাসের পালার হিসাব ও সময়সূচি এক মাস আগেই তৈরি করা হচ্ছে।
৭৫০ শয্যার এই হাসপাতালে কেবিন আছে ৪৪টি। এর মধ্যে ভিভিআইপি কেবিন ৩টি ও ভিআইপি কেবিন ১৮টি। কেবিনে শয্যা মোট ৬৪টি। এ ছাড়া ৫ ধরনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা আছে ১০০টি।
হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রসুল আমিন বলেন, তিনটি কারণে রোগী ভর্তি শুরু করা যাচ্ছে না। ৪০ ধরনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এখনো হাসপাতালে আসেনি। এসব যন্ত্র আসবে ইউরোপ থেকে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যন্ত্রপাতি সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালে মেডিকেল গ্যাস বা অক্সিজেন সরবরাহ এখনো শুরু হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, প্রয়োজনীয় জনবল এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
এই হাসপাতালে মানসম্পন্ন বিশেষায়িত সেবা দেওয়ার জন্য ১৫৭ জন মেডিকেল অফিসার এবং ১৩৯ জন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক প্রয়োজন। এমন কথা হাসপাতালের প্রকল্প দলিলে উল্লেখ আছে। এসব পদে এখনো কোনো নিয়োগ হয়নি। বিএসএমএমইউ থেকে চিকিৎসক নিয়ে আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে।
হাসপাতাল চালাতে চিকিৎসকের পাশাপাশি ১ হাজার ৫০৬ জন নার্স, টেকনিশিয়ান, তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন। এর মধ্যে নিয়োগ হয়েছে ১৪৪ জনের। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ পদে নিয়োগই হয়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল নিয়োগ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে পড়েছে। জনবল নিয়োগ না দিলে রোগী ভর্তি শুরু হবে না, অনেক যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত পড়ে থাকবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি আছে। উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সব যন্ত্র এপ্রিলের মধ্যে চলে আসবে। আশা করি, নিয়োগের বড় অংশ দুই–তিন মাসের মধ্যেই শেষ হবে। আমি আশা করছি, আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতাল পুরোপুরি চালু হবে।’