বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলে তাদের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সারজিস এমন হুঁশিয়ারি দেন। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সারজিসের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। মিনিট পাঁচেক শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করে মিছিল নিয়ে তাঁরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে এসে অবস্থান নেন।
১৫ আগস্ট ঘিরে পাল্টা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা ঠেকাতে ডাকা ‘রেজিস্ট্যান্স উইকের’ অংশ হিসেবে সর্বাত্মক অবস্থান কর্মসূচিতে এ কথা বলেন সারজিস।
সাংবাদিকদের সারজিস বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আমার রাস্তায় নামার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কুচক্রী মহল ফ্যাসিবাদের দোসররা তাদের কুচক্র এখনো শেষ করেনি। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে তারা বিভিন্ন অপচেষ্টা করার চেষ্টা করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আবার রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। আমরা চাই না, আমাদের রাস্তায় নামার কারণে আমাদের একজন ভাইবোনেরও সমস্যা হোক। কিন্তু দেশ যখন সংকটে পড়ে যায়, তখন কষ্ট হলেও আমাদের রাস্তায় নামতে হয়। কারণ, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ থেকে শুরু করে স্বৈরাচারের দোসররা একটা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছে, বিভিন্ন মহল থেকে এমন খবর পাচ্ছেন উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলে তাদের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, যে অস্তিত্ব নিয়ে ১০০ বছর পরে হলেও তারা বাংলাদেশে এসে দাঁড়াতে পারবে। তাদের সাবধান করে দিতে চাই, এই দেশ নিয়ে আর কোনো ছেলেখেলা করবেন না। ছাত্র-জনতা মিলে এ দেশকে যেদিকে যাওয়া প্রয়োজন, সেদিকে নিয়ে যাবে। এর জন্য যা করা প্রয়োজন, আমরা তা-ই করব।’
সরকারকে বসাতে পারি, আবার নামাতেও পারি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্প্রতি যে চার দফা দাবি জানিয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে সারজিস আলম বলেন, ‘রেজিস্ট্যান্স উইক আমরা দিয়েছি এই জায়গা থেকে যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটাতে চায়। তারা এমন কোনো নোংরা পরিকল্পনা করলে তা রুখে দেওয়ার জন্য ছাত্র-জনতা রেজিস্ট্যান্স উইক দিয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হচ্ছে ছাত্র-জনতার সরকার। আমরা তাদের প্রশ্ন করব, চাপে রাখব। কিন্তু এটুকু বিশ্বাস করি যে তাদেরও আমাদের দাবি দ্রুততম সময়ে মেনে নেওয়ার সদিচ্ছা আছে৷ ইতিমধ্যে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থপাচার ও লুটপাটে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে কোনো দীর্ঘসূত্রতা দেখলে আমরা বলে দিচ্ছি, তাদের যেমন আমরা ওই গদিতে বসাতে পারি, তেমনি নামাতেও পারি।’
সারজিস আরও বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে কোথাও একটি পিলার নির্মাণ করা হলেও তার ক্রেডিট শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে। তাহলে এ দেশে যে নামে-বেনামে, হিসাবে-বেহিসাবে আমাদের যে ভাইবোনদের হত্যা করা হয়েছে, তার ক্রেডিটও খুনি হাসিনার কাছে যায়। এই সাম্যের বাংলাদেশে আমরা চাই, ওই খুনি হাসিনারও এমন বিচার হোক, যেটি একপেশে নয়। খুনির জন্যও আমরা ন্যায্যতার কথা বলছি।’
আজ সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী সাংস্কৃতিক জোট ব্যানারে একদল ব্যক্তি শাহবাগের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। বক্তব্যের পর সেখানে চলছে গান।