সুজন আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। আজ রোববার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে
সুজন আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। আজ রোববার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে

সুজনের সংবাদ সম্মেলন

রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে

অতীতের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটির মতে, দেশে যেন একক ব্যক্তির স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।

আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুজন। সেখানে সুজনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের আশু ও দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতীতে যা ঘটেছিল, সেগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। অপশাসন, বিচারহীনতা, দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থপাচার যেন না ঘটে। যারা এসব অন্যায় করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারের জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করতে হবে।

দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বদিউল আলম বলেন, বিকৃত, নিম্নমানের, প্রতিহিংসামূলক ও ল্যাং মারার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বদল আনতে হবে। এটি পরিবর্তন দুরূহ ও কষ্টসাধ্য। কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকারের বরখেলাপ করে। ২০০৮ সালের আগেও দলগুলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের কথা বলেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারে সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব আসেনি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধি নেই। প্রশাসন যাঁরা ভালো বোঝেন, এমন কেউ নেই। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব দেখতে পাচ্ছেন না। এটাকে আরও সম্প্রসারিত করা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তাতে বলা হয়, পরিবর্তিত পটভূমিতে মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ ও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য যৌক্তিকভাবে যতটুকু সময় প্রয়োজন হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোকে মেনে নিতে হবে। তারপর ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

সুজনের পক্ষ থেকে ৫টি আশু করণীয় এবং ১৯টি দীর্ঘমেয়াদি করণীয় প্রস্তাব করা হয়। আশু করণীয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুততার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা, জুলাই-আগস্টে সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি, পরিবারকে সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসাসহ পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করা এবং জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা।

সুদূরপ্রসারী করণীয়গুলোর মধ্যে সংবিধান সংশোধন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনী আইনের সংস্কার, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদের কার্যকারিতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস অন্যতম।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সুজনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন, সুজনের নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন প্রমুখ।