সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের মাধ্যমে সাইবার স্পেস (অনলাইন জগৎ) যেমন সবার জন্য সুরক্ষিত হবে, একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষা পাবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নতুন আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যম বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতটুকু নিশ্চিত থাকবে?
জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এটা কোনোভাবেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে না। আগে সাইবার নিরাপত্তা আইনে যেসব বিতর্কিত ধারা ছিল, তার সব কটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনকে পতিত স্বৈরাচার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিল উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, সেই আইনের মাধ্যমে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। সেটাকে পরিবর্তন করে এখন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদন করা হয়েছে। এর মৌলিক বিষয় হচ্ছে সাইবার স্পেসকে নিরাপদ করা।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বলেন, আপনি (শফিকুল আলম) বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আপনার দপ্তর থেকে কোনো চাপ আসেনি, এটা নিশ্চিত। কিন্তু বিভিন্ন সমন্বয়ক একাধিক অফিসে গিয়ে তালিকা দিয়ে এসেছেন, এঁদের বের করতে হবে। এটা গণমাধ্যম স্বাধীনতার জন্য কতটা সহায়ক?
জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমি আমার গভর্নমেন্টের (সরকার) কথা বলতে পারি। প্রাইভেট সিটিজেন কে কী করছে, সেটা তো আমি বলতে পারি না। আমার গভর্নমেন্টের কেউ এ ধরনের কোনো ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাব) করে, কোথাও যেয়ে বলে…আপনি আমাকে বলবেন। আমার গভর্নমেন্টের বাইরে কাজ কে কী করল; সেটা বিএনপি হোক, আওয়ামী লীগ হোক আর যে–ই হোক, সেটার দায়দায়িত্ব তো আমার না। বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র...এটার দায়দায়িত্ব তো আমার বিষয় না। আপনারা এটা ওনাদের কোয়েশ্চেন (প্রশ্ন) করেন যে আপনারা কতটুকু প্রেস ফ্রিডমে (সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা) বিশ্বাস করেন। আমার মনে হয় যে উই আর নট দ্য রাইট পারসন টু অ্যানসার দিস কোয়েশ্চেন (আমরা এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল নই)।’
একজন সাংবাদিক বলেন, সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করেছেন। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া গত চার মাসে কর্মকর্তাদের বড় একটা অংশ পদোন্নতি পেয়েছে। নানা রকম সুবিধার জন্য এসব আন্দোলন। আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী আন্দোলন করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা নেবে কি না? কমিশনগুলো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে কি না?
জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, এই সরকারের বড় একটা বিষয় স্বচ্ছতা। সরকার কী করছে, তা সবাই জানছে। একটা স্বচ্ছতা আছে বলে অনেকে হয়তো এগুলো নিয়ে কথা বলছেন। এ রকম নয় যে এটার কারণে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, সিভিল সার্ভিস (বেসামরিক প্রশাসন) গত চার মাসে যথেষ্ট পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছে। গত চার মাসে অর্থনীতি টার্ন অ্যারাউন্ড (ঘুরে দাঁড়িয়েছে)।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্থিতিশীল হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, জুলাই-আগস্টের হত্যা মামলা এবং আওয়ামী লীগ আমলের অনেক মামলা এখন হওয়ায় মামলার সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্ট বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্ট একদমই তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। পরে উনি আরেকটা ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন, যেখানে বেশ কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে।
মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রতিক্রিয়া দেখানো–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ভারত তার প্রতিক্রিয়া দেখাতেই পারে। ভারত ইজ অ্যান ইনডিপেনডেন্ট কান্ট্রি (একটি স্বাধীন দেশ)। আমরা বলছি, এটা মাহফুজ আলমের ব্যক্তিগত মতামত, এটা গভর্নমেন্টের (সরকারের) মত নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথিও উপস্থিত ছিলেন।