প্রথমার আয়োজনে ‘বিজয় বইমেলা' আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মহিউদ্দিন আহমদ। বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে।
প্রথমার আয়োজনে ‘বিজয় বইমেলা' আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন   মহিউদ্দিন আহমদ। বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে।

বিজয় বইমেলা

স্বাধীন চিন্তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই রাজনৈতিক দলগুলোর

‘রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধী মত বা স্বাধীন চিন্তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক সাহিত্যের লেখক গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। একই সঙ্গে তিনি পাঠকদেরও নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাসভিত্তিক বই পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথমা প্রকাশনের বিজয় বইমেলা মঞ্চের আলোচনায় মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখি করছেন। স্কুলে পড়ার সময়েই স্কুলের বার্ষিক সাময়িকীগুলোতে তিনি নিয়মিত লিখতেন। পরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুক্ত হয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন এবং জাসদ–সমর্থিত ছাত্রলীগের সঙ্গে। তবে লেখালেখি সব সময়ই অব্যাহত রেখেছেন।

মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর লেখা বই সম্পর্কে বলেন, তিনি জাসদ, বিএনপি, সর্বহারা পার্টি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে বই লিখেছেন। এসব বইয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সেই সব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সমসাময়িক কালের ওয়াকিবহাল বা সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। একজনের বক্তব্যে পাওয়া তথ্য অন্যজনের বক্তব্যের সঙ্গে বা অন্য পৃথক সূত্রের সঙ্গে মিলিয়ে সত্যতা যাচাই করেছেন। তা সত্ত্বেও প্রাপ্ত সব তথ্য সব সময় বইতে দিতে পারেননি। কারণ, সাক্ষাৎকারদাতাদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের কৃতিত্ব বড় করে অন্যের ভূমিকা খাটো করার প্রবণতা থাকে। অনেক সময় অনেকে তথ্য চেপে যান, ভুল বা বিকৃত তথ্য দেন।

রাজনৈতিক দলের ইতিহাসবিষয়ক বইয়ের ক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, যে দলকে নিয়ে বইটি লেখা, তারা তেমন পছন্দ করে না। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো চায় শুধুই তাদের প্রশংসা করা হবে। যেমন তাদের দলীয় প্রচার পুস্তকে থাকে। তাদের কোনো পদক্ষেপ বা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলে, নেতিবাচক বা বিতর্কিত কিছু তুলে ধরলেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য তাঁকে অনেকের কাছ থেকেই বিরূপ সমালোচনা শুনতে হয়েছে।

আলোচনা পর্বের শুরুতে মহিউদ্দিন আহমদের লেখালেখি সম্পর্কে আলোকপাত করেন অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান।

আলোচনা পর্বের শুরুতে মহিউদ্দিন আহমদের লেখালেখি সম্পর্কে আলোকপাত করেন অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। তিনি বলেন, মহিউদ্দিন আহমদ দেশে রাজনৈতিক সাহিত্যের অগ্রগণ্য লেখক। তিনি একসময় কবিতা ও উপন্যাস লিখেছেন। তবে রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার জন্যই তিনি পাঠকপ্রিয় হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ এবং এর পূর্বাপরের ইতিহাস তাঁর রচনার প্রধান বিষয়। ইতিহাসের যে কালপর্ব নিয়ে তিনি লিখছেন, সেটি তাঁর জীবদ্দশার কাল। তিনি নিজেই ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে ছিলেন। ফলে একদিকে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং যাঁরা সমসাময়িক ঘটনার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের উদ্ধৃত করে মহিউদ্দিন আহমদ যে ইতিহাস রচনা করেছেন তা পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী তাহসিন রেজা। ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’ এবং ‘আমি বাংলার গান গাই’ গেয়ে শুনিয়েছেন শিল্পী অয়ন চাকলাদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথমা প্রকাশনের প্রধান সমন্বয়ক মশিউল আলম।

প্রথমা প্রকাশনের আয়োজনে ১২ ডিসেম্বর থেকে বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হয়েছে ১০ দিনের বিজয় বইমেলা। মেলা চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা অবধি। মেলার পৃষ্ঠপোষকতা করছে এইচএসবিসি ব্যাংক।

বইমেলায় প্রথমা প্রকাশনের বই ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ, অন্য প্রকাশনীর বই ২৫ শতাংশ এবং বিদেশি বই ৫ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে কেনা যাবে।

আগামীকালের অনুষ্ঠান: বিকেলে মেলামঞ্চে নিজের লেখালেখি নিয়ে বলবেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তাঁর বই নিয়ে আলোচনা করবেন অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার, রাশেদ রাহম ও মশিউল আলম। গান শোনাবেন পারসা মাহজাবীন।