ঢাকার বাইরে এখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন

দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই বাড়ছে। এ নিয়ে একজন কীটতত্ত্ববিদ, একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও একজন ডেঙ্গু রোগ বিশেষজ্ঞের অভিমত।

বে-নজির আহমেদ

শুরুতেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া গেলে ডেঙ্গু ঢাকার বাইরে ছড়াত না। ডেঙ্গু ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ায় সমস্যা আরও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

এখন বড় আকারের বরাদ্দ নিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনা করতে হবে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকার বাইরে বড় আকারের পদক্ষেপ নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কি না। এর উত্তর হচ্ছে, নেই। ফলে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা এখন কঠিন। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা—কোথাও এই সক্ষমতা নেই।

এখন পর্যন্ত বড় আকারের বরাদ্দ নিয়ে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আবার কেউ নেতৃত্ব দিতেও চাইছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, মশা নিয়ন্ত্রণ তাদের কাজ নয়। স্থানীয় সরকার বলছে, তারা যথেষ্ট করছে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মূল কাজ হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণ করা, সেটা হচ্ছে না। কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ, গবেষণা, জরিপ—এই কারিগরি কাজগুলো ভালোভাবে হওয়া দরকার, সেটি হচ্ছে না। কীটতত্ত্ববিদ লাগবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কীটতত্ত্বের ওপর পড়াশোনা করছেন, এমন শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে হবে। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখাতেও কীটতত্ত্ববিদ আছেন, তাঁদের কাজে লাগাতে হবে। কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

শুধু মশকনিধনকর্মী দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ঢাকার দুই সিটির প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে দল গঠন করে জরিপ চালাতে হবে। লার্ভানিধনে পাত্র বা আধার নষ্ট করতে হবে। এখন ডেঙ্গু যেভাবে গ্রামে ছড়িয়ে গেছে, তাতে বড় উদ্যোগ না নিলে ডেঙ্গু নতুন মাত্রা নিয়ে আসতে পারে।

ডেঙ্গুর ধরনেরও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। শুধু সংখ্যার হিসাব না করে প্রতিটি মৃত্যুকে গুরুত্ব দিতে হবে। রোগী ব্যবস্থাপনায় মানসম্মত একক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। স্যালাইনের সরবরাহ থাকতে হবে। সব ধরনের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থাকলে বলা যেত, ডেঙ্গু কবে কমবে। এখন প্রকৃতি আর নিয়তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

  • বে-নজির আহমেদ, সাবেক পরিচালক, রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর