কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গত মাসে ঢাকার বাড্ডায় এলাকায় সংঘর্ষের চিত্র
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গত মাসে ঢাকার বাড্ডায় এলাকায় সংঘর্ষের চিত্র

আ.লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদন

ছাত্র-জনতার গণ–আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবিরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম আজ বুধবার আবেদনটি করেছেন।

আবেদনে অভিযোগটি কমপ্লেন্ট রেজিস্টারভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বিধান অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন) আতাউর রহমান বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করা হবে।

আবেদনে ঘটনার স্থান হিসেবে ‘সমগ্র বাংলাদেশ’ উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঘটনার তারিখ ও সময় হিসেবে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এবং ঘটনার তারিখে আহত হয়ে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন তারিখে নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

অভিযোগকারীর আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ–সংবলিত আবেদনটি আজ দুপুরে তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত সংস্থা এখন অভিযোগের তদন্ত করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেবেন। চিফ প্রসিকিউর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন। এর আগে তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তা চিফ প্রসিকিউটরের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন। তখনই এটি ট্রাইব্যুনালের মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আবেদনে আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা; সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের; সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল; সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক; সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তৎকালীন সরকারের কিছু মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য; পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন; ঢাকা মহানগর ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ; ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য; র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ ও কিছু অসাধু র‌্যাব কর্মকর্তা, সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আবেদনে অপরাধের ধরনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ১ থেকে ৯ নম্বর আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশি ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচার গুলি করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাঁদের সমূল বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের মতো অপরাধ করেছে।