নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘শেষ বয়সে যেটুকু করে যেতে চেয়েছিলাম, আমাকে সেটুকু করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাকে টানাহেঁচড়ার মধ্যে রাখা হচ্ছে। এতে দেশের মানুষ ঠকছেন।’
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইবু৵নালে হাজিরা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় আজ বৃহস্পতিবার গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন আদালত। ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এ আদেশ দেন। আগামী ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরও প্রচুর কাজ করতে পারতাম। যদি না এই টানাহেঁচড়ার মধ্যে পড়তাম। এই দুর্যোগের মধ্যে না পড়তাম। এটা হচ্ছে কেন? আমি কি ঠকছি? আমার ঠকার কী আছে? আমি যা করার করেছি।’
অবশ্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ড. ইউনূস এই মামলায় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না।
এ মামলায় ১ জানুয়ারি নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত অন্য তিন আসামি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকে এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত।
২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।