তথ্যচিত্রে ফিরে দেখা

কলসিন্দুরের ফুটবল: সানজিদা–মারিয়াদের পথ ধরে হাঁটছে অনেকেই

প্রায় এক দশক ধরে দেশের নারী ফুটবল মাতাচ্ছে অজপাড়া গাঁ কলসিন্দুর থেকে উঠে আসা একদল কিশোরী ফুটবলার। তাদের পায়ের জাদুতে দেশের ধুঁকতে থাকা ফুটবলে ফিরেছে আশার আলো। দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে তারা, লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছে। তাদের উঠে আসার গল্প নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল ‘ফুটবল রাঙাচ্ছে কলসিন্দুরের মেয়েরা’। তৈরি করা হয়েছিল প্রামাণ্যচিত্র। এখন কেমন আছেন কলসিন্দুরের মেয়েরা?

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কৃতী মেয়ে ফুটবলারদের অনুশীলন। এই বিদ্যালয়ে ৬০ জন মেয়ে নিয়মিত অনুশীল​েন অংশ নেয়। এখান থেকে অনেকেই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে
ছবি: জগলুল পাশা

বাংলাদেশ  জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় সানজিদা বা মারিয়া মান্দা এখন আর ফুটবলপ্রেমীদের কাছে অচেনা নাম নয়। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ফুটবলে হাতেখড়ি ছিল তাঁদের। শুধু সানজিদা বা মারিয়া নয়, এ দলে রয়েছে শিউলি আজিম, মার্জিয়া, তহুরা, শামছুন নাহারসহ আরও অনেক নাম।

এসব মেয়ের প্রত্যেকেই জাতীয় দলে না খেললেও খেলেছেন বয়সভিত্তিক অনেক দলে। মেয়েদের এমন ফুটবলকৃতী যেন ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা কলসিন্দুরকে সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করেছে। জাতীয় পর্যায়ে খেলা এ নারী ফুটবলরারা যেন এখন কলসিন্দুরের নতুন প্রজন্মের মেয়েদের কাছে আদর্শ।

বিশেষ করে গত বছর সাফ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে কিছুটা থেমে যাওয়া কলসিন্দুরের নারী–ফুটবলে নতুন করে জোয়ার বইতে শুরু করেছে। নতুন উদ্যামে আবারও শুরু হয়েছে অনুশীলন।

কলসিন্দুরের মেয়েদের ফুটবেলের এ যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। সেবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নিসা মুজিব গোলন্ডকাপ টুর্নামেন্টে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি গ্রহণ করে কলসিন্দুরের খুদে নারী ফুটবলাররা। এরপর আরও দুবার কলসিন্দুরের মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গৌরব ধরে রাখে।

কলসিন্দুরের মেয়েদের অনন্য এ অর্জনের পেছনের গল্পও মানুষ জানে। কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের তত্বাবধানে অক্লান্তভাবে অনুশীলন করে ছোট ছোট মেয়েরা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য হিসাবে গড়ে তোলে। এরপর এ মেয়েরা প্রাথমিকের গণ্ডি পার হয়ে ভর্তি হয় একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে ভর্তি হয়েও তাঁরা ফুটবলের অনুশীলন বাদ দেননি। উচ্চবিদ্যালয়ের তত্বাবধানে মেয়েরা নিবিড় অনুশীলনে ব্যস্ত থাকেন। বিশেষ করে সহকারী অধ্যাপক মালা রানী সরকার মেয়েদের ফুটবলের দেখভাল করে আসছেন। মালা রানী সরকার বলেন, ‘জাতীয় দলে এখনও আমাদের আটজন মেয়ে নিয়মিতভাবে আছেন। তাঁদের দেখাদেখি নতুন মেয়েরাও জাতীয় দলে খেলার আগ্রহ নিয়ে নিবিড় ভাবে প্রশিক্ষণ করে যাচ্ছে।’

মেয়েদের ফুটবল যেন দিনে দিনে কলসিন্দুরের ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি মেয়েরা এখন ফুটবল প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রতিদিন বিকালে কলসিন্দুর মাঠে মেয়েদের ফুটবল অনুশীলন হয়। কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক জুয়েল মিয়া নিয়মিত অনুশীলন করান। জুয়েল মিয়া বলেন, ‘ছোট–বড় মিলেয়ে ৫০ জন মেয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে অনুশীলন করছে। তাঁদের স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে খেলা। কলসিন্দুরের মেয়েদের ২০১৫ সাল থেকে সহযোগিতা করছে মাসিক ম্যাগাজিন ‘‘কিশোর আলো’’। বর্তমানে ৩২ জন খুদে ফুটবলার ও কোচ জুয়েল মিয়াকে প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ভাতা দিচ্ছে কিশোর আলো

কলসিন্দুরের ফুটবল অনুশীলন করা মেয়েরাও জানান, তাঁদের  স্বপ্ন জাতীয় দলে ফুটবল খেলা। তাঁদের সামনে আদর্শ হিসাবে আছেন সানজিদা, মারিয়া, শিউলিসহ অনেকেই।