ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এক যুগলের ঘনিষ্ঠভাবে বসা নিয়ে বিতণ্ডার জেরে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। ‘আপত্তিকর অবস্থায়’ বসার অভিযোগ তুলে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত একজন ওই যুগলের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান। একপর্যায়ে দুই পক্ষের আহ্বানে ছাত্রলীগের তিনটি হল শাখার নেতা-কর্মীরা খেলার মাঠে যাওয়ার পর মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খেলার মাঠে এই মারামারি হয়। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সাবেক ছাত্র। তিনি বর্তমানে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি করছেন। তাঁর আহ্বানে ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের (পরে শহীদুল্লাহ্ হলও যুক্ত হয়) একদল নেতা-কর্মী মাঠে যান আর যুগলের আহ্বানে যান মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের একদল নেতা-কর্মী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বান্ধবীকে নিয়ে বসে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এক ছাত্র। তাঁরা কিছুটা ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলেন। এ নিয়ে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তি ওই যুগলকে জেরা করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ওই ছাত্রের বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি প্রক্টরিয়াল টিমকে ফোন করলে টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। এর মধ্যে ওই ছাত্র তাঁর হলের বন্ধুদের (মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী) খবর দিলে তাঁরা খেলার মাঠে আসেন। পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি নিজের একসময়ের আবাসিক হলের (ফজলুল হক মুসলিম হল) ‘ছোট ভাইদের’ ফোন করেন। ফজলুল হক হলের ছাত্রদের সঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাও সেখানে আসেন।
দুই পক্ষ মাঠে গেলে কথা-কাটাকাটি থেকে উত্তেজনা তৈরি হয়। শহীদুল্লাহ হলের ওই ছাত্রলীগ নেতাকে জিয়াউর রহমান হলের ছাত্ররা আঘাত করেছেন—এমন অভিযোগ থেকে শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের একটি পক্ষ ঘটনায় যুক্ত হয়ে পড়ে। তাঁরা দল বেঁধে খেলার মাঠে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জিয়াউর রহমান হল শাখার নেতা-কর্মীদের মারামারি শুরু হয়। মারামারিতে জিয়াউর রহমান হলের দুই ছাত্র আহত হন। একজনের মাথা ফেটেছে, অন্যজনের হাতে আঘাত পেয়েছেন। দুজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
খবর পেয়ে রাতে খেলার মাঠে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান। কয়েকজন সহকারী প্রক্টরও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ঘটনাস্থলে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (ফজলুল হক হলের ছাত্র) সবুর খান ও সহসভাপতি আজহারুল ইসলামও (জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি)। পরে দীর্ঘ আলোচনার পর মধ্যরাতে ঘটনার মীমাংসা হয়।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, আহত দুজনের মধ্যে একজনের মাথায় আঘাত লেগেছে। কয়েকটা সেলাইও পড়েছে। আরেকজন হাতে ব্যথা পেয়েছেন। দুই পক্ষকে বুঝিয়ে ঘটনার সমাধান করা হয়েছে। পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে, তাঁর এমনটা করার দরকার ছিল না৷