হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

যেকোনো সাংবিধানিক ইস্যু আইন অনুসারেই দেখব: হাইকোর্ট

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল স্থগিতের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর আগামীকাল সোমবার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। শুনানি নিয়ে আজ রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির এই দিন নির্ধারণ করেন।

শুনানিকালে আদালত বলেছেন, ‘যেকোনো সাংবাধিনিক ইস্যু আমরা আইন অনুসারে দেখব। আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না।’ দুই পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, ‘আপনারা ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। আগামীকাল দুইটায় শুনব।’

আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এই তফসিলের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ২৯ নভেম্বর রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।

বড় দল, ছোট দল—ঘটনাগত প্রশ্ন
শুনানিতে আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘একাদশ সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হচ্ছে। সংবিধানে মেয়াদ শেষের ৯০ দিন আগে নির্বাচনের কথা রয়েছে। অথচ মেয়াদ শেষ হয়নি। সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের জন্য পাঁচ মাস সময় আছে।’

রিট আবেদনকারী আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘আপনি সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ পড়েন।’ তখন অনুচ্ছেদের একটি অংশ তুলে ধরে আইনজীবী বলেন, ‘মেয়াদ-অবসান হয়নি।’ আদালত বলেন, ‘১২৩ অনুচ্ছেদ পুরোটি একসঙ্গে পড়তে হবে।’

ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয়। একটি মেয়াদের পূর্বে এবং অপরটি হচ্ছে মেয়াদের পরে নির্বাচন হতে পারে।’

আদালত বলেন, ‘পরে হলো, দৈব দুর্বিপাকের কারণে।’ তখন ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘সবই অ্যাক্ট অব গড, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছু হয় না।’ তখন আদালত বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে যে হচ্ছে, এটিও আল্লাহর হুকুমে হচ্ছে।’

ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘এখন নির্বাচন হলে দুটি সংসদ হবে।’ তখন আদালত বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় এই প্রশ্নটি এসেছিল—এগুলো সেটেল্ড (সুরাহা) হয়ে গেছে।’

সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি এবং মন্ত্রিসভা ছোট আকারে করা হয়নি, যা আপিল বিভাগের রায়ের ব্যত্যয় বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সব দল অংশ নিচ্ছে না। গত নির্বাচনে তফসিল পরিবর্তন করা হয়, যাতে সব দল নির্বাচনে আসে। বড় দল নির্বাচন করছে না, যাদের জনসমর্থন আছে।’

আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘কে বড় দল, কে ছোট দল, এটি বিচারিক আদালতে সিদ্ধান্ত হতে পারে। কারণ, এটি ঘটনাগত প্রশ্ন।’

ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের জন্য পাঁচ মাস সময় আছে। ইসি কেন এত তড়িঘড়ি করেছে? অন্য দলও আসুক।’

আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। তাদের ক্ষমতা আছে, কখন করবে—নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা করতে পারে। ৫-৪ মাস আগে নির্বাচন করার কথা বলছেন, এটি কোনো সাবমিশন নয়। ইস্যুটা কী?’

রিট আবেদনের প্রার্থনা অংশ তুলে ধরে ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, আপিল বিভাগের রায়ে আছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সংবিধানের মৌলিক কাঠামো।’ তখন তাঁকে আদালত বলেন, ‘ওই রায়ের আলোকে পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে। পড়ে আসেন, তারপরে সাবমিশন (বক্তব্য উপস্থাপন) রাখেন।’

এরপর সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে দেওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাহলে কি মেয়াদ শেষ হতে হবে? মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে করতে হবে নির্বাচন। অর্থাৎ ৯০ দিন আগে নির্বাচন হবে, ফলাফল হবে। কিন্তু তাঁরা কার্যভার গ্রহণ করবেন আগের সংসদের মেয়াদ শেষে। এ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় আছে।’ এরপর দুই পক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘কাল দুইটায় রাখছি। প্রস্তুতি নিয়ে আসেন।’

ইউনুছ আলী আকন্দের করা রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, জাতীয় সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় ১৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল স্থগিতের আরজি রয়েছে। রুল শুনানি বা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আগের নিয়মে, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন সংসদ নির্বাচনের আদেশও চাওয়া হয়েছে। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, জাতীয় সংসদ সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে।