হাইকোর্ট বলেছেন, দুদক কেন নীরব? কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাবে, দুদক চেয়ে চেয়ে দেখবে? তদন্ত শেষ করতে দেরি হচ্ছে কেন? তাদের কাজ করতে হবে।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা পৃথক তিন মামলায় এক আসামির জামিন প্রশ্নে রুল শুনানিতে আজ সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা পৃথক মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন শান্তিনগর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল দেন। আজ রুল শুনানির জন্য আদালতে ওঠে।
এর আগে দুদকের পক্ষ থেকে বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন সম্পূরক হলফনামা আকারে দাখিল করা হয়। আদালতে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। শুনানিতে দুদকের দাখিল করা সম্পূরক হলফনামা তুলে ধরেন তাঁরা।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকের অভিযোগসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১২৯টির মধ্যে মামলা হয়েছে ৫৬টি এবং ৭৩টি অনুসন্ধানাধীন। ৫৬টি মামলায় আত্মসাৎ করা অর্থের মধ্যে ইতিমধ্যে ১১৫ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা উদ্ধার বা ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। উল্লেখিত মামলাগুলো (৫৬টি মামলা) দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন। মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আত্মসাৎ করা অর্থ সম্পূর্ণভাবে নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের শনাক্তকরণ ও তাঁদের জবানবন্দি গ্রহণ (১৬১ ধারায়) কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সব সাক্ষীর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। মামলায় আলামত প্রচুর এবং ব্যাংকের বিশাল পরিমাণ কাগজপত্র থেকে প্রকৃত সব আলামত শনাক্ত করা সময়সাধ্য। এ ছাড়া প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়াও এ মামলায় বেশ জটিল। মামলার তদন্তকাজ এগিয়ে চলছে। আসামি ও আলামত শনাক্ত করা, সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা ও এমএলএআরের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে মামলার প্রয়োজনীয় আলামত পাওয়া সাপেক্ষে এবং প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষ করে যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ে সব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।
সম্পূরক হলফনামা উপস্থাপনের সময় আদালত বলেন, তদন্ত শেষ করতে দেরি হচ্ছে কেন? এটি কি ডাকাতির মামলা যে টি-আই প্যারেড করতে হবে। এখানে সবকিছু ডকুমেন্টারি হওয়ার কথা। কবে মামলাগুলো হয়েছে?
জবাবে মোহাম্মদ আলীর আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে। আদালত বলেন, ‘সাত বছরেও তদন্ত শেষ হলো না? বলা হচ্ছে, প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল, সব আলামত শনাক্ত করা সময়সাধ্য ও সাক্ষীদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কথাগুলো আপত্তিকর। দুদক যদি এসব কথা বলে, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? ড্রামা দেখার মতো। আমরা সবাই দেখছি, ড্রামা হয়ে যাচ্ছে।’
একপর্যায়ে আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন বলেন, ‘মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট উপাদানও নেই। যদি সাক্ষীদের শনাক্ত করা ও জবানবন্দি গ্রহণ (১৬১ ধারায়) কষ্টসাধ্য হয়, তাহলে ছেড়ে দিক। মোহাম্মদ আলীর পাসপোর্ট ও ব্যাংক হিসাব জব্দ আছে। তিনি তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন। মোহাম্মদ আলী ছাড়া ১৫ আসামি জামিনে আছেন।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, ৫৬টি মামলায় অভিযোগপত্র কেন দেওয়া হচ্ছে না, তা দুদক ব্যাখ্যা করবে। তবে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে থাকা ১২টি মামলার বিপরীতে ৪২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ।
শুনানির একপর্যায়ে আদালতে উপস্থিত হয়ে আধঘণ্টা সময়ের আরজি জানান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, চেম্বার আদালতে তাঁর মামলা রয়েছে। পরে আদালত কাল মঙ্গলবার শুনানি ও রায়ের জন্য দিন রাখেন।
বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৫৬টি মামলা করে দুদক, যেখানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।