বাংলাদেশ, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়নি। গণতন্ত্রের দুর্বলতার কারণেই বাইরের শক্তিগুলো এখানকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ সোমবার ঢাকায় এক সেমিনারে এ কথা বলেছেন।
রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে এই সেমিনার হয়। সেখানে মূল বক্তা হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক। সেমিনারে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
ভারত গণতান্ত্রিক দেশ হয়েও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে—এমন অভিমত দিয়ে সেমিনারে উপস্থিত একজন এ বিষয়ে অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে ভারতীয় এই অধ্যাপক বলেন, ‘বাংলাদেশ বা নেপালের যেখানেই যাই না কেন, শুধু শুনতে পাই ওই দেশ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে, সেই দেশ ক্ষমতায় আনতে এদেরকে সহযোগিতা করছে। আমি ২০০১ সালে এটিও শুনেছি যে বিএনপিকে ভারত সহযোগিতা করেছিল। যদিও এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’
অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই দুর্বল বলে বাইরের শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে। কারণ, গণতন্ত্রের প্রতি কেউ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে না। এমনকি ভারতেও এই পরিস্থিতি চলছে। গণতন্ত্রের দুর্বলতার কারণে এটা ঘটছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ অঞ্চলে বাইরের শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে অধ্যাপক সঞ্জয় বলেন, ভারত–পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের সমাধান করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। বরং দেশটি আফগানিস্তান সংকট সৃষ্টি করেছে। বাইরের শক্তিগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কোনোভাবেই সহযোগিতা করবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঔপনিবেশিক মানসিকতার কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ। সীমান্ত হত্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে সীমান্তে কোনো বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি শোনেনি।
তবে বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর কথা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন সীমান্ত হত্যার বিষয়টি আপনারা ভারতের কাছে তুলে ধরেন না? উত্তরে একজন বলেছিলেন যে সীমান্তে যতজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগ মধ্যরাতে হয়েছে। এখন বলেন, কোন কারণে মধ্যরাতে মানুষ সীমান্তে যায়?’
দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতির কারণে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সঞ্জয়। তিনি বলেন, দুই দেশের সরকার ও নাগরিক সমাজের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে।